দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে ক্রমেই বাইরে বেরিয়ে পড়ছেন শ্রমজীবী মানুষ। সড়কে বাড়তে শুরু করেছে যানবাহন, ভীড় বাড়ছে পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতেও।
চলতি মাসের এক তারিখ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ছিলো ফাঁকা। অতি প্রয়োজনীয় গাড়ি ছাড়া তেমন কোনো যানবাহনই চোখে পড়ছিল না। সড়কে সড়কে ছিলো পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাবের চেকপোস্ট। কিন্তু দুই-এক দিন পর থেকেই পাল্টাতে থাকে দৃশ্য। দিন যত গড়াচ্ছে রাজপথে বাড়ছে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি।
এমন প্রেক্ষাপটে প্রথম দফা লকডাউনের শেষ দিনে অর্থাৎ গতকাল বুধবার (৭ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শুধু যানবাহনের চাপই নয়, বরং যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে বাড্ডা-গুলশান লিংকরোড, নতুন বাজার, বসুন্ধরা আবাসিক সংলগ্ন প্রধান সড়কে দীর্ঘ যানজটের দৃশ্য চোখে পড়ে।
ফলে আগে যে ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যালগুলো ছেড়ে চেকপোস্ট শুরু করেছিলেন, সেই ট্রাফিক পুলিশই গাড়ির চাপ বেশি থাকায় সিগন্যাল সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। তবে কিছু কিছু রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকায় সেখানে চেকপোস্ট পরিচালনা করেছে। এ দিকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় বুধবার ১ হাজার ১০২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, যা ছিল গত ছয় দিনের মধ্যে সংখ্যায় সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ২৪৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা।
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর, শাহবাগ, তেজগাঁও সাতরাস্তা, পল্টন, মতিঝিল, এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, লরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মোটরসাইকেলসহ অধিক সংখ্যায় যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।
মিরপুর থেকে মতিঝিল যেতে গিয়ে দেখা যায় রোকেয়া সরণিতে প্রচুর যানবাহন। বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যাই ছিল বেশি। গত ছয় দিনের তুলনায় বুধবার রাস্তায় ছিল অনেক রিকশা। এতদিন রিকশাচালকরা যাত্রী না পেলেও বুধবার তাদের যাত্রীর কমতি ছিল না। বিজয় সরণি প্লেন সিগন্যালের কাছে এসেই পড়তে হয় যানজটে। যদিও খুব বেশি সময় সেখানে দাঁড়াতে হয়নি। এরপর বিজয় সরণি পৌঁছলে পড়তে হয় ট্রাফিক জ্যামে। সেখানে প্রায় ৫ মিনিট পর সিগন্যাল ছাড়ে ট্রাফিক পুলিশ। অথচ গত ছয় দিন এখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের তেমন কোনো কাজ ছিল না। তারা সার্জেন্টদের সাথে চেকপোস্ট পরিচালনা করছিলেন।
বুধবার দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক সদস্য বলেন, যানবাহন কম থাকায় গত ছয় দিন চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। কিন্তু লকডাউনের দিন বাড়ার সাথে সাথে মানুষ ও যানবাহন বাড়তে শুরু করে। এখন তো চেকপোস্ট ছেড়ে সিগন্যাল পরিচালনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়েছে। একইভাবে সিগন্যালে পড়তে হয়েছে লিংক রোডের সাতরাস্তার মাথায়। সেখানেও কিছু সময় অপেক্ষা করে সাতরাস্তা মোড়ের দিকে যেতেই পড়তে হয় চেকপোস্টে। ওই চেকপোস্টে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় পুলিশ কোনো গাড়িকে ভালোভাবে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছিল না। যার কারণে সবাই চলে যাচ্ছিল। দায়িত্বরত পুলিশকে কয়েকটি মোটরসাইকেল আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা গেছে।
ইনামুল নামে একজন বাইকার বলেন, মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন নিষেধ জানি। কিন্তু আর পারছি না। ঘরে খাবার নেই। পকেটে টাকা নেই। কী করব। বাঁচতে তো হবে। তাই বাঁচার তাগিদে মামলার ভয় মাথায় নিয়েই রাস্তায় বেরিয়েছি।
এ দিকে কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় ১১০২ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ ছাড়া ২৪৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা। এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগ ৮০৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জরিমানা করেছে ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহের লকডাউনে রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হয়েছেন ৪ হাজার ১৮৭ জন।
ডিএমপির এডিসি (মিডিয়া) ইফতেখারুল ইসলাম জানান, লকডাউনের সপ্তম দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএমপির আটটি বিভাগে নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় এক হাজার ১০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লকডাউনে সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ৮০৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে জরিমানা করা হয়েছে।