‘কালো ছায়ায় থাকা’ মানুষেরা জো বাইডেনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সোমবার নিজের ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দীকে ঘিরে এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আওড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। রহস্যময় দাবিতে ট্রাম্প বলেন, ওয়াশিংটনে উড়ে যাচ্ছে ‘কালো ইউনিফর্ম’ পরা ‘চোরেরা’। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পুলিশি সহিংসতাকে, চাপের মুখে ভেঙে পড়া গলফারদের সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
সম্প্রতি উইসকনসিনে পুলিশের হাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশজুড়ে চলছে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন। এর কেন্দ্র হয়ে ওঠেছে ওরেগনের পোর্টল্যান্ড। সেখানে ট্রাম্প সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশি সহিংসতার প্রতিবাদ করা বিক্ষোভকারীদের সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে চলতি সপ্তাহে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন একজন। এর আগে উইসকনসিনে এক কিশোরের গুলিতে নিহত হন দুই জন। এমতাবস্থায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে নিজের সমর্থকদের সরে যেতে আহ্বান জানাতে। তবে তিনি তেমনটি করেননি। উল্টো তাদের উৎসাহ দিয়েছেন। চলতি বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পুনঃনির্বাচনি প্রচারণায় আইন ও শৃঙ্খলাকে মুখ্য বিষয় হিসেবে তুলে এনেছেন তিনি।
সোমবার হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রক্ষণশীল গণমাধ্যম ফক্স নিউজ নেটওয়ার্কের লরা ইংগ্রাহাম। তিনি ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার কী মনে হয়, বাইডেনের সুতো ধরে টানছে কারা? সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার লোকজন?’ উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘যেসব মানুষের কথা আপনারা কখনো শুনেননি। যারা কালো ছায়ায় থাকে।’
সাধারণত ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল ইংগ্রাহামও তার এই উত্তরে হতচকিত হয়ে ওঠেন। জিজ্ঞেস করেন, ‘এর মানে কী? এটাতো শুনতে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মতো মনে হয়। কালো ছায়া। এটা কী? ট্রাম্প আবারো জোর দিয়ে বলেন, রাস্তায় এমন মানুষজন আছে, যারা রাস্তার কর্মকা- নিয়ন্ত্রণ করছে।’
দুইজনের মধ্যকার কথোপকথন শিগগিরই আরো উদ্ভট মোড় নেয়। প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট শহর থেকে একটি প্লেনে আমাদের একজন লোক ওঠেছে। সে প্লেনটি পুরোটাই কালো ইউনিফর্ম পরা চোর দিয়ে ভর্তি ছিল। তাদের কাছে নানা হাতিয়ার ছিল।’
এতক্ষণে হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়া ইনগ্রাহাম এবার আরো বিস্তারিত জানার জন্য চাপ দেন। তবে সে চাপ অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আপনাকে অন্যকোনো সময় বলবো। আপাতত এটা তদন্তাধীন রয়েছে।’ তবে তিনি দাবি করেন, ওই প্লেনটিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করার জন্য পর্যাপ্ত লোকজন ছিল। প্রসঙ্গত, বারাক ওবামা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র তথ্য ছড়াতে ট্রাম্পের কুখ্যাতি রয়েছে।
ইনগ্রাহামকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের বর্ণবাদী দিকও তুলে ধরেন ট্রাম্প। কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে পুলিশি সহিংসতার প্রতিবাদে দেশব্যাপি চলমান ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনকে একটি ‘মার্ক্সবাদী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দেন। বলেন, প্রথম যখন এ আন্দোলনের কথা শুনেছিলাম, তখনই বলেছিলাম এটা একটা ভয়াবহ নাম। এটা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক। এটা কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য খারাপ। সবার জন্য খারাপ।
মঙ্গলবার উইসকনসিনের কেনোশায় সফর করার কথা রয়েছে ট্রাম্পের। সম্প্রতি সেখানে জ্যাকব ব্লেক নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানকে সাত বার গুলি করেছে পুলিশ। এতে কোমড় থেকে পক্সগু হয়ে গেছেন ব্লেক। এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সহিংসতা। কেনোশার গভর্নর টনি এভারস সতর্ক করেছেন ট্রাম্প শহরটিতে গেলে সেখানে উত্তেজনা আরো বাড়বে।
পুলিশি সহিংসতার পক্ষ নিয়ে ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বলেন, পুলিশরা আজ অবরোধের সম্মুখীন- কারণ, তারা ১০ হাজার ভালো কাজ করতে পারে, যা তারা আসলেই করে- কিন্তু একটি খারাপ কাজ বা গল্ফ খেলার সময় খারাপ শট নেওয়ার মতো ভুল করে।
ব্লেককে সাতবার গুলি করা নিয়ে তিনি বলেন, লোকটিকে এতবার গুলি করা হয়েছে। তারা কী ভিন্ন কিছু করত পারতো না, ধ্বস্তাধস্তি করতে পারতো না? কিন্তু এর মধ্যে তিনি যদি অস্ত্র জোগাড় করতে যেতেন? আপনি জানেন, সেখানে বড় কিছু ঘটছে। কিন্তু তারা ভুল করে, ঠিক গল্ফ টুর্নামেন্টের মতো, তারা তিন-ফুট দূরত্বে গর্তে বলটি ফেলতে ব্যর্থ হয়।
এসময় ইনগ্রাহাম দ্রুত ট্রাম্পকে আটকে দেন। নিজস্ব সহযোগীর মতো ট্রাম্পকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। বলেন, আপনি অবশ্যই পুলিশি সহিংসতাকে গল্ফের সঙ্গে তুলনা করছেন না। কারণ, গণমাধ্যম সেটাই বলবে।
এদিকে, ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে লুফে নিয়েছেন। সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, আপনি জানেন অবস্থা খুব খারাপ যখন প্রেসিডেন্টকে ভুলবাল বলা থেকে রুখতে লরা ইংগ্রাহামকে এগিয়ে আসতে হয়।