বছর পাচেক আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা বহুপক্ষীয় পরমাণু চুক্তি থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে ইরান।
শুক্রবার মার্কিন ড্রোন হামলায় দ্বিতীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর এমন ঘোষণা দিল ইরান।
ইরানের এমন ঘোষণায় প্রশ্ন উঠেছে, চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে পুরোদমে পরমাণু কর্মসূচি চালানো শুরু করলে কবে নাগাদ পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে ইরান?
চুক্তির মূল লক্ষ্যই ছিল ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে। বিনিময়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে উপসাগরীয় দেশটিকে নিষ্কৃতি দেয়া হবে।
কিন্তু ২০১৮ সালে এই চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে আসার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে দেশটির বিরুদ্ধে একেরপর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছেন।
বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের শঙ্কা দূর করতে পরমাণু চুক্তিটি করা হয়েছিল। এই চুক্তির আগে এমন আশঙ্কা ছিল যে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঠেকানোর নামে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলা চালাতে পারে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ইরান ক্রমাগত এই চুক্তিতে আরোপ করা কিছু শর্ত ভঙ্গ করে চলেছে।
তবে শুক্রবার মার্কিন সেনাদের ড্রোন হামলায় জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর ইরান চুক্তির সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
এমন পরিস্থিতিতে আর্ন্তজাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা যে প্রশ্ন তুলেছেন, ইরান কি তাদের ইউরেনিয়াম পরিশোধন ২০ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাবে? পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে কর্মসূচিকে কোন দিকে নিয়ে যাবে? এবং কত দ্রুত তা করবে তারা?
চুক্তিতে উল্লেখ করা ছিল, ইরানের ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা তিন দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করলে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে ইরান। বোমা তৈরির উপকরণ পেতে দ্রুতই ইউরেনিয়াম পরিশোধনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে তারা। কেননা পরমাণু বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিবিসির প্রতিবেদনে প্রকাশ, ২০১৫ সালের আগে ইরানে অনেক পরিমাণে পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের মজুদ ছিল। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাদের দাবি ছিল, প্রায় ২০ হাজার সেন্ট্রিফিউজেস পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের মজুদ করেছিল ইরান। যা দিয়ে দশটির বেশি পরমাণু বোমা তৈরি করা যাবে।
মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, এসব পরিশোধিত ইউরেনিয়াম দিয়ে ইরান দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পরমাণ বোমা তৈরি করতে সক্ষম।
এরপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি অনেক সীমিত হয়ে গেছে। বর্তমানে চাইলে কমপক্ষে এক বছর সময় ব্যয়ে পরমানু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে ইরান। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান যদি সব বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ইউরেনিয়াম পরিশোধনের মাত্রা ২০ শতাংশে উন্নীত করে, তাহলে ছয় মাস বা তারও কম সময়ের মধ্যে এটি করা সম্ভব।
তবে পরমাণু চুক্তির অন্য দেশগুলো এখনো আশা করছে কাসেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নিতে ইরান ঐ পথে যাবে না।
রোববার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইরানকে পরমানু চুক্তিবিরোধী কোনো কিছু না করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, ইরান সে কথা না মেনে চুক্তি ভঙ্গ করে পরমানু শক্তিধর দেশের তালিকায় উঠে আসবে কি? কারণ যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা হুমকি দিতে সে পথ ছাড়া অন্য কিছু ভাবছে না ইরান।