মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে দুইবার ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উৎখাতসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা এবং মৃত্যুর হুমকি দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন বরিশাল নগরীর নৌবন্দর সংলগ্ন একটি ওষুধের দোকানের মালিক শিরিন খানম (৩০)।
ফেসবুক লাইভের কিছু সময় পরই ওই নারীর মালিকানাধীন শিরিন ফার্মেসিতে তিনি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পরেন।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে রোববার দিবাগত রাতে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কত্যর্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় ওই নারীর ভাই বাদী হয়ে সোমবার সকালে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
ওই নারীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন তার শরীরে বিষাক্ত কোনো মেডিসিন পুশ করা হয়েছে।
তবে শিরিন খানম নিজেই ওই ইনজেকশন পুশ করেছেন, না তার শরীরে কৌশলে অন্য কেউ পুশ করেছে তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
শিরিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল ও মেডিকেল পরিদর্শন করেছে।
জানা গেছে, ওই নারীর মৃত্যুর পরপরই তার জনপ্রিয় ‘শিরিন খানম’ নামের ফেসবুক আইডিটি ডিঅ্যাক্টিভ হয়ে যায়। এর আগেই অনেকে তার ফেসবুক লাইভের ভিডিও সংরক্ষণ করেন।
ওই ভিডিও চিত্রে শিরিন তার মালিকানাধীন ফার্মেসিটি উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে স্থানীয় ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, পার্শ্ববর্তী ওষুধ ব্যবসায়ী জনিসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন।
ফেসবুক লাইভে তাকে (শিরিন খানম) মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার কথাও বলা হয়। এমনকি ‘শিরিন ফার্মেসি’ নামের তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ার জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বেশ কয়েকজন তাকে চাপ প্রয়োগ করেন। আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে তিনি দোকান ছেড়ে না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে।
ফেসবুক লাইভে শিরিন খানম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, জনি ও তার বউ, কয়েস মিয়া, রনি, মারুফ এবং তার এক বন্ধু আলো আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শেষ করে দিল। অনেক অনুরোধ করেও দোকানটি রক্ষা করতে পারলাম না। আমি বিচারের ভার জনগণের ওপর দিয়ে গেলাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিরিন খানমের ফেসবুক লাইভের কথোপকথনে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ কয়েক ব্যবসায়ী ফেঁসে যেতে পারেন। তাই তার (শিরিন) মৃত্যুর পর ফেসবুক আইডি বন্ধ করে সেই কথোপকথন মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
অনেকের ধারণা, শিরিনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি কেউ নিয়ে ফেসবুক আইডিটি বন্ধ করে দিয়েছে।
এ নিয়ে পুলিশের তৎপরতা শুরু হলে রাতেই ওই আইডিটি ফের সচল করা হয়।
শিরিন আক্তার নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোড এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুনের স্ত্রী।
শেবাচিম হাসপাতালের পুলিশের ইনচার্জ এসআই নাজমুল হুদা জানান, শিরিন খানমের মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে তার লাশ নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরবর্তীকালে লাশের সুরাতাল রিপোর্টের জন্য প্রথমে আটকে রেখে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম সোমবার জানান, ফার্মেসি ব্যবসায়ী শিরিন খানমের মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই ইউসুফ মৃধা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শেবাচিম হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন ও আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পাশাপাশি শিরিনের মৃত্যুর পর পরই তার ফেসবুক আইডি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।