ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় প্রদান করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, ফাজিল শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন শামীম, নুর উদ্দিন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সহসভাপতি ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিদায়ী সভাপতি রুহুল আমিন, মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবসার উদ্দিন, সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর মকসুদ আলম, মাদরাসার বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী হাফেজ আব্দুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, ইফতেখার উদ্দিন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, মো. শরিফ, আবদুর রহিম শরিফ, সাইফুর রহমান জোবায়ের ও জাবেদ হোসেন।
রায় ঘোষণার আগেই মামলাটির ১৬ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগেই রায় ঘোষণার জন্য আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২৭ জুন থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলার ৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন বিদেশে থাকায় এবং তিনজনের সাক্ষ্য অন্য সাক্ষীদের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যাওয়ায় তাঁদের সাক্ষ্যগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তার মায়ের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হয় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে মাদরাসার প্রশাসনিক ভবন কাম সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। তবে ঘটনার পরই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায় সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় পিবিআইকে। এরপরই দ্রুততার সঙ্গে গ্রেফতার হতে থাকে আসামিরা। গ্রেফতারকৃত আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষে গত ২৯ মে অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় পুলিশ।