মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সহকর্মীকে যৌন নিপীড়নের দায়ে সুকুমার মল্লিক শম্ভু নামে এক ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর আগে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে নানা অসদাচরণ, সহকর্মীকে যৌন নিপীড়নসহ নানা অভিযোগ উঠে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৬নং কাদিপুর ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্থানীয়দের জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানে জালিয়াতি, সরকারী নির্ধারিত ফি থেকে তিনগুণ বেশি টাকা নিয়ে স্থানীয়দের নানাভাবে হয়রানী করতেন। এছাড়াও অভিযুক্ত সুকুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে তারই অফিসের মহিলা উদ্যোক্তাকে অফিস চলাকালীন সময় বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব এমনকি জোরপূর্বক শরীরে স্পর্শ করারও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দায়িত্ব পালনকালে পরিষদের চেয়ারম্যান,ইউপি সদস্য ও সচিবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ স্থানীয় মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে। অপরদিকে লিগ্যাল কোন কাজের জন্য স্থানীয়রা ইউনিয়ন অফিসে গেলে সুকুমার মল্লিক নানা টালবাহানার মাধ্যমে সময় বিলম্ব করে অতিরিক্ত টাকা নেন। এমনকি জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়ানো ও কমানোর নামে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও এই উদ্যোক্তা চলতি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর কোন ধরনের ছুটি ও অনুমতি না নিয়ে ভারত সফর করারও অভিযোগ রয়েছে।
এসব খবরে স্থানীয় ইউনিয়নের বাসিন্দাসহ পুরো উপজেলা জুড়ে সমালোচনা শুরু হলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে একই পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া, সচিব, নির্বাচিত ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে পরিষদের সাধারণ সভা ডেকে তাকে অব্যাহতি প্রদান করে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়।
কাদিপুর ইউনিয়নের মহিলা উদ্যোক্তা মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় মোবাইলে বলেন, সুকুমার মল্লিককে আমি অফিসিয়াল নিয়ম অনুযায়ী শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করে মহিলা উদ্যোক্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করতাম। কিন্তু তিনি আমাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন,এমনকি মুসলিম থেকে হিন্দু বানিয়ে বিয়ে করার চাপ সৃষ্টি করেন। গত ঈদ-উল আযহার পর আমাকে ভারতে বেড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বলেন সেখানে একটি বড় মন্দির আছে। তুমি আমার সাথে গিয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হব বলে বারবার চাপ দিয়েছেন সুকুমার মল্লিক।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই মহিলা উদ্যোক্তা আরো বলেন, সুকুমার মল্লিক শরীরে স্পর্শ করে যৌন নিপীড়ন করেন বিষয়টি লজ্জা ও ভয়ে প্রথমে কাউকে বলিনি। পরে অতিষ্ঠ হয়ে পরিষদকে জানালে ঘটনাটির সত্যতা পেয়ে সুকুমারকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই অব্যাহতিতে তার বিচার যেন শেষ না হয়। আমি চাই আর যাতে কোন মহিলা যৌন নিপীড়নের শিকার না হয় এই প্রতিবাদ প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে করব।
ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ নজরুল ইসলাম হিরা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সুকুমার মল্লিককে পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তার এই ঘটনায় ইউনিয়নের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে দ্রুত বিচার দাবি করছি।
কাদিপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে মৌখিকভাবে সতর্ক করার পরও জন্ম নিবন্ধন দিতে স্থানীয়দের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। এছাড়াও অফিসের মহিলা উদ্যোক্তার সাথেও অনৈতিক প্রস্তাবসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে পরিষদের সর্ব সম্মতিক্রমে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করেছি।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাকে অব্যাহতি দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলেশন হাতে পেয়েছি। তার দুর্নীতি ও মহিলা উদ্যোক্তার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন সচিব সুকুমার মল্লিক। তিনি বলেন,এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। পরবর্তী করনীয় সম্পর্কে ভাবছেন তিনি।