খালের একটি মোহনা। ভিমরুলি ভাসমান হাট। তিন দিক থেকে তিনটি খাল এসে মিশেছে এখানে। অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত এ মোহনায় ফলচাষিরা নৌকা বোঝাই ফল নিয়ে ক্রেতা খুঁজে বেড়ান। এই হাটের আশেপাশের সব গ্রামেই ভরপুর পেয়ারা বাগান। এসব বাগান থেকে চাষিরা নৌকায় করে সরাসরি এই বাজারে পেয়ারা নিয়ে আসেন। পেয়ারা বোঝাই শত শত নৌকা। বিক্রেতারা এই খালে খুঁজে বেড়ান ক্রেতা।আর ক্রেতাদের বেশিরভাগই হল পাইকার। বড় ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে তারা বাজারে আসেন। এখান থেকে পেয়ারা কিনে ঢাকা কিংবা অন্য কোনো বড় শহরে চালান করে দেন তারা। এটি প্রতিদিনের দৃশ্য ভিমরুলি ভাসমান হাটের। ভাসমান পানির উপরে বসে এই হাট। প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি।দক্ষিণাঞ্চলের ঝালকাঠী ও স্বরূপকাঠীর বিভিন্ন জায়গায় ভাসমান এই হাট বসে। এ রকম কাছাকাছি রয়েছে তিনটি হাট ভিমরুলি, আটঘর এবং কুড়িয়ানা। জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলি গ্রামের ছোট্ট খালজুড়ে সারা বছরই বসে ভাসমান হাট। হাটটি বেশী জমে পেয়ারা মৌসূমে। পেয়ারা মৌসুম শেষ হলে আসে আমড়ার মৌসুম। এ অঞ্চলে আমড়ার ফলনও সর্বত্র। আর সবশেষে আসে সুপারি। সবজি তো আছেই। ভাসমান বাজারের উত্তর প্রান্তে খালের উপরে ছোট একটি সেতু। সেখান থেকে বাজারটি খুব ভালো করে দেখা যায়। ভিমরুলি বাজারের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় দুপর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা। ঝালকাঠী জেলা সদর থেকে মোটরবাইকে এই হাটে আসতে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা। আর ইঞ্জিন নৌকায় আসলে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। এই ভাসমান হাটে শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে কেনাবেচা হয় কোটি কোটি টাকার পেয়ারা। কথা হয় ব্যবসায়ীদের সাথে। তারা জানান, বরিশাল বিভাগের এই অঞ্চলে দেশের অন্য জায়গার চেয়ে বেশি পেয়ারা পাওয়া যায়। যা পরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়। এখানে নদী ও খালকেন্দ্রীক ব্যবসার প্রসার ঘটায় মালামাল পরিবহনে খরচ কম। একইসঙ্গে পরিবহন সহজও। তবে ইচ্ছে করলে সড়ক পথেও পণ্য পরিবহন করা সম্ভব। তবে সময়, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সঙ্গে নৌকায় যাতায়াত আর যোগাযোগ ব্যবস্থাটা এখানকার মানুষের সঙ্গে মিশে গেছে। বরিশালের বানারীপাড়া, পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর-কুরিয়ানা এবং ঝালকাঠি সদর উপজেলার কৃর্ত্তিপাশা ও নবগ্রাম ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে দেশ তথা উপমহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারার বাগান। প্রায় ৩শ বছর ধরে এ অঞ্চলে পেয়ারার আবাদ হয়ে আসছে।
মাসে কোটি টাকা লেনদেন : ভাসমান পেয়ারা বাজারে
Share!