যেদিন ঘোষণা হয়েছিল মিমি চক্রবর্তী যাদবপুর কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হচ্ছেন, সেদিন টলিপাড়ায় বিস্ময়ের বান ডেকেছিল। বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে সেই মুহূর্তে মিমি চক্রবর্তীই ছিলেন প্রায় এক নম্বর নায়িকা। কারণ এই ঘোষণার ঠিক কিছুটা আগেই টলিউডের নামী প্রযোজনা সংস্থার একটি ছবি ছাড়তে হয় নায়িকা নুসরাত জাহানকে। সেখানে নুসরাতের জায়গায় আসেন মিমি।
তা নিয়ে টলিপাড়ায় আলোচনায় হয়েছে বিস্তর। এখন ভোটপর্ব মেটায় মুখে একটি বিষয় স্পষ্ট। টলিউডের নামী প্রযোজনা সংস্থার ছবিতে এখনই নুসরাত জাহানকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বরং মিমির সামনে যে কোনও মুহূর্তে আসবে সুযোগ। মিমির থেকেই জানা গেল, প্রচার পর্ব শুরুর আগেই দু’-তিনটে প্রোজেক্ট এসেছিল তাঁর কাছে, যেগুলো তিনি করতে চান। এবার দ্রুত শ্যুটিং ফ্লোরে ফিরতে বদ্ধপরিকর নায়িকা।
তারই সঙ্গে আজ জিতলে নিজের কেন্দ্রের জন্য কী-কী কাজ করবেন, তার তালিকা তৈরি করে নিয়েছেন নায়িকা। সাতদিনের মধ্যেই এলাকার উন্নয়নের কাজে হাত দেবেন, এমনটা ঠিক করেছেন। প্রচারপর্বে মানুষের স্পর্শে দুই হাতে আঁচড় ভর্তি নায়িকার। লাগাতার প্রচারে ডায়েট চার্ট মেনে খাবার খাওয়াও বিঘ্নিত। ত্বকে ট্যান পড়েছে অপরিসীম। সবকিছুর কবল থেকে বেরিয়ে তরতাজা হয়ে আবার ‘নায়িকা’ সত্তায় ফিরতে হবে মিমিকে।
প্রসঙ্গত প্রচার পর্ব জুড়ে তাঁকে নিয়ে যেসব ট্রল বা সমালোচনা হয়েছে, তা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন মিমি, সে কথা জানিয়েছেন। কিন্তু টলিউডের একাংশই মিমির বিরোধীকে ভোট দিয়েছেন (যাঁদের কেন্দ্র ছিল যাদবপুর এমন তারকাদের একাংশ)। অর্থাৎ রাজনীতিতে আসার কারণে টলিউডের মধ্যেই মিমির বিরোধী পক্ষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে এবার। আজ জিতলে তাঁদের এক গোল দেবেন মিমি, সন্দেহ নেই। কিন্তু না জিতলে সমালোচনা সাংঘাতিক মাত্রা নেবে।
পাশাপাশি গত দু’-তিন মাস অভিনয় থেকে যে বিরতি নিলেন, সে বিরতি ভেঙে যখন ফিরবেন, তখন কামব্যাক ছবি হিট হওয়া জরুরি। কারণ নায়িকার হাতে অনেকদিনই কোনও বড় হিট নেই। তবে প্রচারপর্বে মানুষের কাছে যে উপচে পড়া ভালোবাসা পেয়েছেন মিমি, তাতে তাঁর পরিচিতির পরিধি টলিউডে নুসরাত ছাড়া বাকি বাণিজ্যিক ছবির নায়িকাদের চেয়ে যে ‘বড়’ হয়ে গিয়েছে, চোখ বন্ধ করে বলা যায়। সেটা মিমির ফিল্ম কেরিয়ারেও ভালো প্রভাব ফেলবে। আজ জিতলে কেন্দ্রের জন্য কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার পাশাপাশি সঠিক চিত্রনাট্য বেছে নিতেই হবে মিমিকে, টলিউডে পায়ের তলার শক্ত মাটি ফিরে পেতে।
কবে সুখবর দেবেন নুসরাত
নুসরাত জাহানের রাজনীতি-আগ্রহ রয়েছে এ কথা টলিউডে অনেকেই জানতেন বলে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে বসিরহাট থেকে নায়িকার নাম ঘোষণা হওয়ায় টলিপাড়ায় তেমন উত্তেজনা হয়নি। সে সময় নুসরাত কোনও ছবির শ্যুটিংয়ে ব্যস্তও ছিলেন না। ২০১৮-য় নায়িকা অভিনীত ‘ক্রিসক্রস’ আর ‘নাকাব’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত নুসরাতের কোনও ছবিও মুক্তি পায়নি। অর্থাৎ বড়পর্দায় নুসরাতের বিরতি চলছে মাস আটেক। নায়িকা মনস্থিরও করেছেন এরপর শুধুমাত্র সেই ছবিরই অংশ হবেন, যা দর্শকমনে পাকা জায়গা করতে পারবেন।
কবে শ্যুটিং ফ্লোরে পাওয়া যাবে নুসরাতকে, প্রশ্নের উত্তরে নায়িকা জানান, এই সপ্তাহেই চিত্রনাট্য পড়তে শুরু করে দিচ্ছি। ভালো চিত্রনাট্য পেলেই কাজ করব। তবে ভোটপর্বের বিরতির সঙ্গে আরও কিছুটা সময় বিরতি জুড়তে পারে বলে নায়িকার এক ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর। কারণ বর্তমানে নায়িকার বিশেষ বন্ধু নামী ব্যবসায়ী নিখিল জৈনের সঙ্গে তিনি নাকি আগামী মাসেই সাতপাকে বাঁধা পড়বেন বলে মনস্থির করেছিলেন।
তবে সম্প্রতি নায়িকা দিদাকে হারিয়েছেন। বাড়ির এমন পরিস্থিতিতে কোনও সুখবর আগামী মাসেই আসবে নাকি আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরি হচ্ছে। নায়িকার পক্ষে অবশ্য এ ব্যাপারে নিশ্চিত করা হয়নি কোনও কিছুই। তবে বসিরহাটে ভোটপর্বের দিন নিখিল জৈনকে নায়িকার পাশে একঝলক দেখা গেছে বলেই, আঁচ করা যায়, এবার সম্পর্ককে পরিণতি পর্বে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন দু’ জনে। শোনা যাচ্ছে দেশের বাইরে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং হবে নুসরাতের। টলিউডে নুসরাতের বন্ধুদের মতো নুসরত-নিখিল জুটি চোখে আরাম দেওয়া।
তবে মিমির মতোই একটি রাজনৈতিক রং গায়ে মেখেছেন বলে টলিউডে নুসরাতেরও কিছু বিরোধী এই মুহূর্তে সরব। তাঁদের টেক্কা দিতে ব্যক্তিগত জীবনে নতুন পদক্ষেপের পাশাপাশি হিট ছবির অংশ হওয়ার দরকার নায়িকার। যেহেতু নামী প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কবে কাজ করবেন এখনই বোঝা যাচ্ছে না, তাই কোন পরিচালক নুসরাতের কাছে ভালো চিত্রনাট্য নিয়ে আসেন, সেটাই দেখার। কারণ তার ওপরই নির্ভর করবে কত দ্রুত নুসরাত তাঁর ভক্তদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন। পাশাপাশি আজ জিতলে নুসরত যে তাঁর নতুন বাড়ি বসিরহাটের মানুষদের নিরাশ করবেন না, তা আঁচ করা যায় নায়িকার কথা থেকে। এইসময়