Friday , 1 November 2024
সংবাদ শিরোনাম

৮০ বছরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে সাড়ে ছয় ফুট, বিলীন হবে উপকূল

চলতি শতাব্দির শেষ দিকেই সমুদ্রপৃষ্ঠের স্তর বাড়তে পারে সাড়ে ছয় ফুট মিটারেরও বেশি। এ ঘটনাকে ‘মানবতার জন্য খারাপ পরিণতি’ বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে বিশ্বের উপকূলীয় শহরগুলোকে সতর্ক করেছেন তাঁরা।

জাতিসংঘের ক্লাইমেট সায়েন্স প্যানেলের সর্বশেষ প্রধান প্রতিবেদনেও এসবের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তখন ধারণা করা হয়েছিল চলতি শতকের শেষ দিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে এক মিটার বা প্রায় সোয়া তিন ফুট। কার্বন নির্গমন এবং বরফ গলে যাওয়ার কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

এসব বিষয় নিয়ে নতুন মূল্যায়ন তৈরি করেছেন ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির জনাথন বামবারসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। এতে উল্লিখিত সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বা সাড়ে ছয় ফুট বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে যা সত্য হলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে মানব জাতির জন্য। জনাথন বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির এই ঘটনা দ্রুত ঘটবে এবং এর ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ‘যদি আগামী ৮০ বছরে বিষয়টি ঘটে তবে তা মানব সমাজের জন্য এত ভয়ঙ্কর হবে যা অকল্পনীয়।’

বামবার বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট বৃদ্ধি পেলে প্রায় ১.৭৯ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার ভূমি বিলীন হবে। আর উদ্বাস্তু হবে বিশ্বের ১৮৭ মিলিয়ন মানুষ। তবে, অনেক ছোট দ্বীপরাষ্ট্র, বিশেষত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, চমৎকার বাসযোগ্য হবে। কেননা, শীতপ্রধান এসব অঞ্চলের তাপমাত্রা সহনশীল হবে।

মূল্যায়নপত্রে আগের ২২ শীর্ষ গবেষকের গবেষণাকাজের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কীভাবে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিক বরফ গলবে- সেই প্রসঙ্গও।

বলা হয়েছে, কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ২১০০ সালের মধ্যেই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটারেরও বেশি বাড়তে পারে। আর বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বাড়তে পারে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে এটি তার চেয়ে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

এটি অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এর যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৩ সালে ‘ইন্টারগভর্নমেন্ট প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ রিপোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন তৈরি করে জাতিসংঘ। এতে বলা হয়, ২১০০ সালের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনা হলো এই সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৯৮ সেন্টিমিটার বাড়বে। আর এই বৃদ্ধি কয়েক ভাগ বেশি হবে অ্যান্টার্কটিকায় যদি এই শতকেই ভেঙে পড়ে সেখানকার বরফ। অর্থাৎ  বৈশ্বিক উঞ্চায়নে বরফ কতটা সাড়া দেবে তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। কেননা, বিজ্ঞানীরা এখনও এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত নন।

একটি ব্যাপার হলো, স্যাটেলাইটে দেখা গেছে বরফ দ্রুত কমছে। তবে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। তা হলো, বরফের উপরিভাগের নিজস্ব চাপেও নিচের দিকে গলতে পারে, যাতে মনে হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই তা গলছে।

এ ব্যাপারে আশাবাদীও বামবার। তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন দ্রুত পরিমাণ মতো কমাতে পারলে সমুদ্রপৃষ্ঠ দুই মিটার বৃদ্ধির ঝুঁকি কমানো যাবে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে, তবে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top