এমন ঘটনা আমরা শুনেছি বা দেখেছি। সিনেমায় তো মা আর সন্তানের আত্মিক বন্ধনের দৃশ্য তুলে ধরা হয় নানা ঘটনার মাধ্যমে। হয়তো ছেলে কোথাও কোনো বিপদে পড়েছে, এদিকে অকারণে ঘুম ভেঙে গলো মায়ের। কিংবা তার মনটা অশান্ত হয়ে ওঠে কোনো অজানা আশঙ্কায়। আবার চোখের সামনে বাচ্চার বিপদ ঘটলে মায়েরা নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করে ঝাঁপ দেন। এটা আসলে মায়ের সঙ্গে তার সন্তানের অমোঘ সম্পর্কের উদাহরণ। কিন্তু সন্তানকে রক্ষা করার এই ব্যাখ্যাতীত সহজাত প্রবৃত্তি কেবল যে মায়েদেই থাকে না নয়, বাবারাও কম যান না। তেমনি এক ঘটনা প্রকাশ করেছে সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।
রবিবার রাতে যখন ১৭ বছর বয়সী স্যামুয়েল ঘরে ফেরেনি, তখন বাবা টনি লেথব্রিজের খুব শিরশিরে অনুভূতি হলো, যেখানে আছে শঙ্কা। ফোনে বার্তা কিংবা ফেসবুকে অনেক মেসেজ ও পোস্ট দিয়েও পরিবার তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না তার। স্যামুয়েলের কোনো খবরই নেই। নিদারুণ আশঙ্কায় বিপর্যস্ত হবার দশা বাবা-মা টনি এবং লি’র। তারা দুজন সন্তান হারানোর কথা জানাতে গেলেন পুলিশের কাছে।
পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করলেন এবং বাড়ি ফিরে অপেক্ষায় থাকতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তাদের কি আর ঘুম আসে! তারা নিজেদের মতো খুঁজতে থাকলেন তাকে।
বাবার কেন যেন মনে হচ্ছিল, তার ছেলেটি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে এবং কোথাও আহত হয়ে পড়ে রয়েছে।
প্রথমেই তারা স্যামুয়েলের বন্ধুদের বন্ধুদের কাছে খোঁজ-খবর করতে থাকলেন। তাদের কাছ থেকে জানা গেলো, স্যামুয়েল তার বান্ধবীকে নিয়ে কাছের এক শহরে ড্রাইভে গেছে। টনি কেন যেন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে ছেলেটির গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে।
টনির একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো। ওটা ঘটেছিল তার ছেলে যে স্থান দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যায় সেখানেই। এক দুর্ঘটনায় কোনো এক গাড়িচালক পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। পরে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই আশঙ্কা পিতাকে একদণ্ড বিশ্রাম নিতে দিলো না। তিনি চিন্তা করে দেখলেন, স্যামুয়েল যে পথে গিয়েছিল তার আশপাশে অনেক ঝোপঝাড় আছে। যদি গাড়ি এর ভেতরে চলে যায় তো আকাশপথে দেখা ছাড়া উপায় নেই।
কিন্তু এর পেছনে বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না। সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে। অস্ট্রেলিয়ার এই পরিবারটির দিশেহারা অবস্থা। বাবা আর অপেক্ষায় থাকলেন না। ঠিক করলেন, তিনি একটি হেলিকপ্টার ভাড়া করে ছেলেকে খুঁজবেন। একটি এভিয়েশন গ্রুপ থেকে হেলিকপ্টার ভাড়া করতে ৮০০ ডলার জোগাড় করলেন। সঙ্গী হলে স্যামুয়েলের আঙ্কেল মাইকেল লেথব্রিজ। টনির আবার বিমানভীতি রয়েছে।
কিন্তু খোঁজাখুঁজি কোথা থেকে শুরু করতে হবে? কোন পথেই বা খুঁজতে হবে? এ তো বিশাল এক জায়গা। সবকিছুর জবাব মিলতে থাকলো পিতার অন্তর থেকে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা থেকেই খোঁজা শুরু হলো। হেলিকপ্টার মাটি ছাড়ার ১০ মিনিটের মাথায় একটি সাদা গাড়ি দেখা গেলো। ওটা সিডনির উত্তরের নিউক্যাসলের কাছেই প্যাসিফিক হাইওয়ের পাশেই দুর্ঘটনায় পড়েছে। এই অঞ্চল গাড়িতে করে চষে ফেললেও এই গাড়িটি হয়তো দেখা যেতো না। কারণ, পুরো অঞ্চল গাছপালায় ছাওয়া।
ওখানেই ছিল পুত্রধন। গাড়িতে আটকে রয়েছে সে। নড়াচড়া করছে না। জরুরি উদ্ধার দল চলে আসলো। গাড়িটিকে কেটে স্যামুয়েলকে বের করা হলো। প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে স্যামুয়েল এখানে আটকে রয়েছে। মারাত্মক আঘাত পেয়েছে সে। কিন্তু বেঁচে রয়েছে।
টনি বললেন, ‘আমি গাড়ির কাছে চলে গেলাম। স্যামুয়েল আমার সঙ্গে কথা বললো। আমি তাকে আঁকড়ে ধরলাম।
পরম আদরের সন্তান তখন পিতার ছায়ায়। আশ্বস্তের সুরে আলতো করে বললেন, ‘বাবা তোমাকে খুঁজে পেয়েছে বাছা’।