শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে নিষিদ্ধ সাব্বির রহমান নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার এক মাস আগেই কীভাবে জাতীয় দলে ফিরলেন, সে সম্পর্কে কেউই সঠিকভাবে কিছু বলতে পারছে না! নিষিদ্ধ সাব্বিরকে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে দেখেও তালিকা অনুমোদন দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। নির্বাচকেরা বলেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফির সুপারিশের বিষয়টি। মাশরাফি সেই দাবি অস্বীকার করে দায় দিয়েছেন বিসিবি ও নির্বাচকদের। কিন্তু আসলেই কীভাবে সাব্বির দলে আসলেন সে বিষয়ে সবাই দায় এড়িয়েই যাচ্ছেন!
শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পাওয়া সাব্বিরের ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা ছিল ফেব্রুয়ারিতে। নিউ জিল্যান্ডে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজের সময়ও তার নিষিদ্ধই থাকার কথা। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের চাপাচাপিতে অনেকটা বিরক্ত হয়েই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন জানান, অধিনায়ক জোরোলোভাবে দাবি করায় দলে নেওয়া হয়েছে সাব্বিরকে।
কিন্তু পরের দিনই গণমাধ্যমের কাছে সুপারিশের কথা অস্বীকার করেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি। তার বক্তব্য ছিল, দাবি জানানোর এখতিয়ারই তার নেই। তিনি কেবল ক্রিকেটীয় যুক্তি দেখিয়ে দলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সেই যুক্তি নির্বাচকেরা গ্রহণ করেছেন। প্রধান নির্বাচক ও অধিনায়ক, দুজনই পরিষ্কারভাবে বলেছিলেন, সাব্বিরের নিষেধাজ্ঞা কমানোয় তাদের হাত নেই। তাহলে সাব্বিরের শাস্তি কমাল কোন কর্তৃপক্ষ?
এমন প্রশ্নে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দিয়েছেন বিস্ময়কর এক তথ্য। তিনি জানতেনই না যে সাব্বিরের সাজা আরও একমাস আছে! সোমবার চট্টগ্রামে বিসিবি সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন লিস্ট আমার কাছে সই করার জন্য আসে, সবার সই হওয়ার পর, তখন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওর শাস্তির ব্যাপারটা। শাস্তি শেষ হচ্ছে কবে। আমাকে বলেছে, শাস্তি জানুয়ারিতে শেষ। হয়তো ভুল করে বলেছে। একটা হতে পারে, মেয়াদটা কমিয়ে দেওয়াতে শাস্তি কমে গেছে। আমি তখন আর বেশি কিছু জিজ্ঞাসা করি নাই।’
বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচকের গড়া দলের চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয় সভাপতির কাছ থেকে। কিন্তু সাব্বিরের শাস্তি শেষের ভুল তথ্য কে দিয়েছিলেন, সেটি মনে করতে পারলেন না নাজমুল হাসান, ‘আমার ঠিক মনে নেই কে বলেছিল…। ওখানে যারা নিয়ে এসেছিল…। আমাকে বলা হয়েছিল শাস্তির মেয়াদ শেষ জানুয়ারিতে। আকরাম হতে পারে বা নান্নু, যারা সাধারণত দল নিয়ে আসে আমার কাছে। একটা হতে পারে যে ডিসিপ্লিনারি কমিটি হয়তো কমিয়েছে।’
এ ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে পাপন বলেন, ‘আসলে আগে আমি প্রতিটা জিনিসে যেভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম, বিশেষ করে দলের ব্যাপারে, স্কোয়াড নিয়ে, গত তিন মাস ধরে কিন্তু আমি একদম অফ। ইন্টারফেয়ার একদমই করছি না। সবশেষ মনে হয় এশিয়া কাপে ইমরুল, সৌম্যকে নিয়েছি ইন্টারফেয়ার করে। সাব্বিরের ব্যাপারটা আমার মনে হয়, ক্যাপ্টেন, কোচ ওরা হয়তো চেয়েছে। ওরা চাইছিল মূলত বিশ্বকাপের জন্য। ওরা বলছিল, যদি পারফর্ম করে, তাহলে বিশ্বকাপে ওর একটা সুযোগ আছে।’
কিন্তু সাব্বিরের শাস্তি ঘোষণার সময় বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন, এটাই তার শেষ সুযোগ। এদিনও সেই কথা বলেছেন তিনি, ‘এটা অবশ্যই ওর জন্য শেষ সুযোগ। ১৫-২০ দিন কমানো তো বড় কথা নয়, এরপরেও যদি আবার করে, জীবনও আর খেলতে পারবে না। আমি মনে করি আরও বেশি সময় নিয়ে, আরও বুঝে শুনে আসলে ওর জন্য ভালো হতো। বিশ্বকাপের আগে সিরিজটা ওকে খেলাতে পারে, নাও পারে। দলের সঙ্গে নিয়ে গেল হয়তো ওর সেন্টিমেন্ট, মেন্টালিটি সব ঠিক করার জন্য। কন্ডিশনিংয়ের জন্য হতে পারে। এখন ওর জন্য ঝুঁকি অনেক বেশি। একটা ছোট্ট ভুলেও ওর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।’