কুমিল্লায় দ্বিতীয় স্বামীর দেয়া বাড়িতে চতুর্থ স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন নাসিমা আক্তার নামে এক গৃহবধূ। সোমবার রাত ৯টায় কুমিল্লা নগরীর শাকতলা থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পর শিশু সন্তানসহ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন চতুর্থ স্বামী মেহেদী হাসান।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৫ বছর পূর্বে নোয়াখালী জেলার চাটখীল উপজেলার জায়েকবাজার এলাকার প্রবাসী আলমগীর হোসেনের সাথে বিয়ে হয় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মগের কলমিয়া গ্রামের আলী হোসেনের কন্যা নাসিমা আক্তারের। নাইমুর রহমান অনি নামে এ সংসারে এক ছেলেও হয়। কিছুদিন পর আলমগীর হোসেনকে তালাক দিয়ে তার আপন বড় ভাই (ভাসুর) প্রবাসী শহীদ উল্যাহকে বিয়ে করে নাসিমা। এ সংসারেও নাজিমুর রহমান অমি নামে এক ছেলে আছে। বিয়ের সময় শহীদ উল্যাহ স্ত্রীকে ৩০ ভরি স্বর্ণলংকার উপহার দেয়। দাম্পত্য সুখের আশায় নাসিমা আক্তারের নামে কুমিল্লা শাকতলায় সাড়ে তিন শতক জমি ক্রয় করে একটি টিনসেট বাড়ি নির্মাণ করে দেন এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন। শহীদ উল্যাহ প্রবাসে চলে যাওয়ার সুযোগে হুমায়ুন কবির নামে এক যুবকের সাথে নাসিমা অবাধে চলাফেরা শুরু করে। একপর্যায়ে শহীদ উল্যাহকে তালাক দিয়ে হুমায়ুনকে বিয়ে করে নাসিমা।
এরই মধ্যে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নাসিমার সাথে পরিচয় হয় বরুড়া বাজারের মেহেদী ফ্যাশনের মালিক ও বরুড়া উপজেলার আগানগর গ্রামের মেহেদী হাসানের। হুমায়ুনের সহযোগিতায় নাসিমা নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা কাবিনে মেহেদীকে বিয়ে করে। পরে নাসিমার বহুবিবাহ ও হুমায়ুনের সাথে অবৈধ সম্পের্কের বিষয়টি জানতে মেহেদী যোগাযোগ বন্ধ দেয়। এর জেরে নাসিমার যৌতুকের মামলায় জেলে যেতে হয় মেহেদীকে। পরে মেহেদীর পরিবারের হস্তক্ষেপে নাসিমা মামলা প্রত্যাহার করে মেহেদীকে জামিনে মুক্ত করে। এরপর নতুন করে দাম্পত্য শুরু করে। সালমান জাহিদ ত্বকী নামে এ সংসারে দেড় বছরের একজন শিশু সন্তানও আছে।
অমি নোয়াখালীর পিতার বাড়িতে থাকে। অনি মায়ের বাসায় থেকে শাকতলা হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ত্বকী মা বাবার সাথে থাকত। ২১ জানুয়ারি দুপুর ২টায় স্কুল থেকে ফিরে এসে অনি দেখে বাড়ির গেইটে তালা ঝুলছে। মা-বাবার মোবাইল বন্ধ পেয়ে সন্ধ্যায় অনি বাড়ির দেয়াল টপকে খোলা জানালা দিয়ে গেইটের চাবি নেয়। এরপর গেইট খোলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে মায়ের মৃত দেহ কম্বলে মোড়ানো। মেহেদী হাসান ও ত্বকী নেই।
খবর পেয়ে রাত ৮টায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রাত সাড়ে ৯টায় ইপিজেড পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজিজুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সুরতহাল শেষে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসিমার এক বান্ধবী বলেন, মূলত নাসিমাকে প্রথম লালমাই উপজেলার পেরুল উত্তরের কাঁকসারে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু স্বামী মাদকাসক্ত হওয়ায় এ সংসার টেকেনি বেশি দিন।
নিহতের ভাই মনির হোসেন বলেন, বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব রুমের বক্স খাটে নাসিমা আক্তারের লাশ কম্বল দিয়ে ডেকে রেখেছে খুনিরা। তার মাথা পূর্ব দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে ফিরানো। তার গলায় তার দিয়ে পেছানোর চিহৃ রয়েছে। মেহেদীর ছোট ভাই তুগা ফোন করে জানিয়েছে ত্বকীকে কেউ একজন বরুড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদ পিপিএম বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেহেদী হাসানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাদি হয়েছে নিহতের পিতা আলী হোসেন।