জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন পুলিশ। যেসব নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ কর্মকর্তারা হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তার করে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়া করছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে তাঁদের প্রত্যাহার করে সেখানে নিরপেক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পুরানা পল্টনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আছে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকা-৪ থেকে ১৮ আসনে একই সময়ে জনসভা ও গণমিছিল এবং ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণফোরামের সহসভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক। পরে ড. কামাল হোসেন মৌখিক বক্তব্যের পাশাপাশি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। ড. কামাল বলেন, ‘নির্বাচনের যে চিত্রটা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো, তা নজিরবিহীন। আমি ৪০ থেকে ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের নির্বাচন দেখছি। কোনো দিন এমন চিত্র দেখিনি। এতে বোঝা যায়, কেন্দ্রীয় আদেশ-নির্দেশের ভিত্তিতে এগুলো করা হচ্ছে। এটা সংবিধানকে সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন।’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৩টি নির্বাচনী এলাকায় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থিতা শূন্য হয়ে গেছে। ২০ ডিসেম্বরও ১১ জনের প্রার্থিতা স্থগিত করেছেন কোর্ট। ১৬ জন প্রার্থী কারাগারে। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের সঙ্গে
সাংঘর্ষিক আইন করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের ক্ষেত্রে পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিধান করেছে। অন্যদিকে উচ্চ আদালত একে একে তাঁদের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করে চলেছেন। এতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের নির্বাচনের আগেই মাঠ থেকে সরে যেতে হচ্ছে এবং এর সুবিধা নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। প্রায় প্রতিদিন নানাভাবে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে, যা ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচনের বাইরে ঠেলে দেওয়ার শামিল।
ড. কামাল বলেন, ‘নির্বাচন জিনিসটা কী? একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নির্বাচনে সরকারি দলের লোক থাকে, বিরোধী দলের লোক থাকে। তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তাদের জনগণ ভোট দেবে। তাই ভোট চাওয়ার জন্য তাদের জনগণের কাছে যেতে হয়, আবেদন করতে হয়। এখনই যে অবস্থা চলছে, সাত দিন পর কী অবস্থা হবে সেটা তো আপনারা বুঝতে পারছেন। এখন যারা প্রার্থী তাদের কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চেষ্টা করতে হচ্ছে নির্বাচন করার, এটা নজিরবিহীন।’ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মাথা ঠিক করেন, মাথা ঠাণ্ডা করেন, মাথা সুস্থ করেন। নির্বাচনে জিততে হবে; কিন্তু এই ভাবে না।’ তাঁর অভিযোগ, সরকার যে কায়দায় এসব কাজ করছে, তা সব স্বৈরাচার সরকারকে ছাড়িয়ে গেছে।
ড. কামাল আরো বলেন, ‘পুলিশ আদেশপ্রাপ্ত হয়ে সারা দেশে যেভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তা নজিরবিহীন। পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেটা কোনো দিন আমি দেখিনি। ভোটের আরো সাত দিন আছে। আমি গঠনমূলকভাবে বলতে চাই, এটা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। না হলে সংবিধান লঙ্ঘন করার গুরুতর অপরাধ হবে।’ ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারকাজে প্রকাশ্যে বাধা দিচ্ছে সরকারি দলের সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রার্থীসহ নেতাকর্মী-সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা থামছেই না। প্রশাসনের সহযোগিতা ও নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তাই আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এসব অপকর্মে সাহস জোগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে ঐক্যফ্রন্ট। বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলা, ভাঙচুর ও নির্যাতনের খতিয়ানও তুলে ধরা হয় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।