‘আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বর্তমানে একটি প্রাইভেট কম্পানিতে জব করেন আর ভারতে কেউ একবার এমএলএ হয়ে গেলে তার ১০ পুরুষ বসে বসে খায়।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাশের দেশ ভারতের এক নাগরিকের পোস্ট এটি। আমাদের দেশেও রাজনীতিকদের নিয়ে ধারণা কমবেশি এ রকম। পেশার মূল্যায়ন হয় আয়ের মানদণ্ডে। সেই হিসাবে রাজনীতিকে পেশা হিসেবে দেখতে চায় না সাধারণ মানুষ। বিজ্ঞজনেরও ভাষ্য, রাজনীতি হলো সমাজসেবা।
কিন্তু সমাজের সেবা করতে হলে অর্থের প্রয়োজন, আবার সমাজসেবক যিনি, তাঁর নিজেরও খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। যিনি সমাজের সেবা করার জন্য রাজনীতিতে আসবেন, তাঁর আয়ের উত্স কী হবে? এর উত্তরে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী একবার বলেছিলেন, শুধু রাজনীতি কারো পেশা হতে পারে না। মানুষ রাজনীতি করে আদর্শের কারণে। যাঁরা রাজনীতি করবেন তাঁদের অন্য কোনো পেশা থাকা উচিত। তিনি নিজে একজন প্রথিতযশা চিকিত্সক, চাকরি ছাড়াও স্বাধীনভাবে আয়-রোজগারের পথ প্রশস্ত ছিল তাঁর। রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন সরাসরি তখনকার রাষ্ট্রপতির আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে। সমাজসেবা-দেশসেবার জন্য তিনি নিরাসক্তভাবে রাজনীতিতে আসতেই পারেন। কিন্তু যাঁদের এমন স্বাধীনভাবে উপার্জনের পেশা নেই, স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে পেতে মাঝবয়স পেরিয়ে যায়, পারিবারিক রাজনীতির বাড়তি সুবিধাও নেই, রাজনীতি কি তাঁদের জন্য বারণ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন বলেন, ‘পেশা বলতে আমরা বুঝি আয়, সেই হিসাবে রাজনীতি পেশা নয়। এটি সেবামূলক কাজ, যা অন্য পেশায় থেকেও করা যায়। চাকরি, ব্যবসা করেও তো মানুষ সমাজসেবা করে থাকে। একজন অন্য কিছু করবেন, সেইসঙ্গে চাইলে রাজনীতিও করতে পারেন। সরকারি চাকরি করে রাজনীতি করা যায় না, আইনগত বাধা আছে। তবে ব্যবসা, এনজিও বা বেসরকারি চাকরি করে, শিক্ষকতা, ওকালতি বা সাংবাদিকতা করেও রাজনীতি করা যায়।’
সার্বক্ষণিক রাজনীতি শব্দগুচ্ছটি বোধ হয় প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে অনেকটাই। তবু দলীয় আদর্শ বা প্রধান নেতা-নেত্রীর প্রতি আপসহীন আনুগত্য নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেন এমন অনেক নেতাকর্মী আছেন সব দলেই। তৃণমূলের এই নেতাকর্মীদের অনেক প্রতিকূল সময় পার করতে হয়। রাজনৈতিক দলের নিয়মিত কর্মসূচি পালনের জন্য সাংগঠনিক তত্পরতা ও কর্মী লাগে, অর্থ লাগে। দলের কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে কিছু পেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদেরই খরচের জোগান দিতে হয়। দল ক্ষমতায় থাকলে খরচ জোগানো সহজ হয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলে কঠিন হয়।
ড. আখতার হোসেনের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল থাকা দরকার, যেখান থেকে ফুলটাইম অফিস হোল্ডার যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। দলের সাংগঠনিক খরচের জোগান দেওয়া উচিত।
তহবিল নিয়ে কোনো দলেরই সুনির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা না থাকায় সার্বক্ষণিক রাজনীতি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন, রাজনীতিকদের আয়-রোজগার নিয়েও বিস্তর কানাঘুষা। অনেকে পকেটের টাকা খরচ করে রাজনীতি করছেন, অনেকে আবার রাজনৈতিক পরিচয়কে আয়ের পথ হিসেবে ব্যবহার করছেন। রাজনৈতিক দল ও সহযোগী বা অঙ্গসংগঠনের পদ-পদবির প্রভাব খাটিয়ে আয়-রোজগার করছেন এঁরা। এঁদের জন্য রাজনীতি হচ্ছে পেশা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমারই ছাত্র ছিল এরা, এখন দেখি এক কোটি-দেড় কোটি টাকার গাড়ি চালায়। কোথা থেকে আসে এত টাকা এদের? মওলানা ভাসানী সারা জীবন রাজনীতি করে গেছেন, ঢাকায় তাঁর কোনো সম্পদ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ওই ৩২ নম্বর বাড়ি ছাড়া আর কিছু ছিল না।’
রাজনীতিকদের বিকল্প পেশা বা আয়ের উত্স থাকা উচিত, না হলে অসত্ লোকেরা রাজনীতিকে পেশা হিসেবে অপব্যবহার করবে। এরা আদর্শের ধার ধারে না, রাজনীতি এদের কাছে অবৈধ আয়ের উত্স। জনমনে যেমন, সামাজিক মাধ্যমেও এ রকম নানা প্রশ্ন। রাজনীতি কি পেশা হতে পারে?—এমন প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দিয়েছেন এক ব্লগার। ‘একদমই না!’ হলফনামায় যে প্রার্থীরা পেশা হিসেবে ‘রাজনীতি’ লেখেন, এতেও তাঁর আপত্তি। মন্ত্রী-এমপি হলে বাড়ি-গাড়ি, বেতন-ভাতা পাওয়া যায়, কিন্তু এরপর? ক্ষমতায় না থাকলে তখন তাঁদের আয় কী হবে?—এ রকম প্রশ্ন রাখেন তিনি।
আরেকজন মত দিয়েছেন, সার্বক্ষণিক নেতা বা কর্মী হলে দলের উচিত তাঁকে বেতন-ভাতা দেওয়া। ক্যাডারভিত্তিক দলে (কমিউনিস্ট পার্টি) সেই ব্যবস্থা আছে। উন্নত বিশ্বেও এমন উদাহরণ আছে। আর অবৈধ আয়ের বন্দোবস্ত সব পেশাতেই আছে। চিকিত্সক, প্রকৌশলী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যাংকার, শিক্ষক, আইনজীবী—সব পেশার লোকই যে যার অবস্থানে থেকে সুযোগ সাপেক্ষে দক্ষতার সঙ্গে অবৈধ আয় করছে। রাজনীতিও এর বাইরে নয়।
অধ্যাপক আখতার হোসেন বলেন, রাজনীতিবিদরা আলাদা কোনো প্রজাতি নয়। এটি একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র। যে কেউ যেকোনো সময় রাজনীতিতে আসতে পারেন, যেতে পারেন। এটি জনসেবারই একটি পথ। ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে আসাতে দোষ নেই, যদি তিনি রাজনীতিকে ব্যবসার কাজে না লাগান। অবসরের পর যেকোনো পেশার লোকই রাজনীতিতে আসতে পারেন, এতে দোষের কিছু নেই।
এই উপমহাদেশের রাজনীতির শুরু থেকেই আইন পেশার ব্যক্তিরা এগিয়ে এসেছেন। বিলেত থেকে ব্যারিস্টারি পড়ে এসে স্বাধীন আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেছেন, রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন, স্বাধীন পেশার আয় থেকে দলের জন্য খরচ করেছেন, দলের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হলে আইনগত সহায়তা দিয়েছেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের এ ধারা এখনো রাজনীতিতে বহাল রয়েছে। রাজনীতিতে এখনো আইনজীবীদের সরব উপস্থিতি দৃশ্যমান। তবে সংসদ নির্বাচনে তাঁদের অংশগ্রহণ কমে এসেছে। প্রথম সংসদে এমপিদের ৩১ শতাংশ ছিল আইনজীবী, দশম সংসদে তা নেমে এসেছে ১৩ শতাংশে। ওই সংসদে শিক্ষক ছিলেন ১২ শতাংশ, বিদায়ী সংসদে মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষক। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯-এ।
একসময় কর্মী-সমর্থকদের চাঁদায় দলের তহবিল গড়ে উঠত। দেশের প্রায় ১০ কোটি ৪১ লাখ নিবন্ধিত ভোটার কোনো না কোনো দলকে ভোট দেবে, মাসে ১০ টাকা চাঁদা দিলেও বছরে অন্তত এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আদায় হতো রাজনৈতিক দলগুলোর। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হিসাব বিবরণী থেকে দেখা যায়, সদস্য চাঁদা ও তহবিলে দানসহ ২০১৬ সালে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আয় ছিল যথাক্রমে চার কোটি ৮৪ লাখ ও চার কোটি ১৩ লাখ। খরচ হয়েছে তিন কোটি ও চার কোটি টাকা। বছরজুড়ে সারা দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর রয়েছে নানা কর্মসূচি, মামলা-মোকদ্দমা, নেতাকর্মীদের সাহায্য-সহায়তা, চিকিত্সার খরচ। এর প্রায় পুরোটাই বহন করে ব্যবসায়ীরা, যা হিসাব বিবরণীতে আসে না। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ের কর্মসূচিতে অর্থ আসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। নির্বাচনের সময় প্রার্থীপ্রতি প্রচারণার খরচ বেঁধে দেওয়া আছে ২৫ লাখ টাকা, বাস্তবে খরচ হয় এর কয়েক গুণ বেশি। নির্ধারিত অঙ্কের হিসাবও যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উল্লেখযোগ্য এক হাজার প্রার্থীর প্রচারণায় খরচ হবে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা, যার সিংহভাগই আসবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যয় তোলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিল সংগ্রহ হয় প্রকাশ্যে ও গোপনে। ভারতেও এর রেওয়াজ আছে। কোনো দলকে কোনো ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কত টাকা চাঁদা দিল, তা প্রকাশও করা হয়। আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের সব দান গোপন রাখারই রেওয়াজ। বিএনপি নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টু যখন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন, তখন তিনি দাবি করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে যে অর্থ চাঁদা নেয়, তার জন্য যেন তারা রসিদ দেয়। সে দাবি অবশ্য বাস্তবায়িত হয়নি।
এখন ছাত্ররাজনীতি নিরুত্সাহ করা হয় পরিবার, সমাজ এবং শিক্ষাঙ্গন থেকে। এর পরও যারা ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে, একটা সময় তাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়, জীবিকার তাগিদ শুরু হয়। তারা চাকরি বা ব্যবসায় ঢোকে। অল্পসংখ্যক তরুণ রাজনীতিতে জড়িয়ে থাকে, দলের মনোনয়নের জন্য অপেক্ষা করে দশকের পর দশক। তাদেরও জীবিকার প্রয়োজনে কিছু না কিছু করতে হয়, কারণ সার্বক্ষণিক রাজনীতি কারো আয়ের গ্রহণযোগ্য বা নির্ভরযোগ্য উত্স না। আনুষ্ঠানিক চাকরির বয়স শেষ হয়ে যায় তত দিনে, তখন ব্যবসায় নেমে পড়েন অনেক ছাত্রনেতা। এঁদের মধ্যে কারো কারো ভাগ্যে জোটে দলের মনোনয়ন।
হু’স হু-এর ডাটাবেসে দেখা যায়, রাজনীতি পেশা না হলেও বিভিন্ন পেশার যাঁরা রাজনীতিতে আসেন তাঁদের মধ্যে সবার আগে আছেন আইনজীবীরা। এর পরেই আছে ব্যবসায়ীদের স্থান। অন্যান্য পেশার মধ্যে আছে কূটনীতিক, সামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ, চিকিত্সক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আর ভারতের লোকসভায় ২০ শতাংশ। ২০১৫ সালে কানাডার সংসদ নির্বাচনে দেখা গেছে প্রার্থীদের মধ্যে শুধু ২২ শতাংশ রাজনীতি বা সরকারে কাজ করেছেন এমন। আইনজীবী ১৯ শতাংশ, শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ৯ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা থেকে ৪ আর সাংবাদিকতা থেকে ১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি এসেছেন ব্যবসা থেকে, ২৭ শতাংশ। মতামত জরিপে দেখা গেছে, কানাডার অনেক অধিবাসী আইনজীবীদের চেয়ে অর্থনীতি ও হিসাব-নিকাশের জ্ঞানসম্পন্ন ব্যবসায়ীদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে বেশি পছন্দ করেছেন।
২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল ২৫ শতাংশ, রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৪ শতাংশ, আইনজীবী ১৩ শতাংশ, সরকারি চাকুরে ৪ শতাংশ, শিক্ষাবিদ ২ শতাংশ।
রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের যুক্ত হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন অনেক তরুণ বুদ্ধিজীবী। সুচিন্তা বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনীতি থেকে কোনো আয় নেই, কিন্তু এখানে ব্যয় আছে অনেক। এই ব্যয় আসতে পারে অনুদানের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের দেশে তো রাজনীতিবিদদের অনুদান বা চাঁদা গ্রহণের সংস্কৃতি নেই। ফলে রাজনীতিবিদরা নিজেরাই নানাভাবে ব্যয়ের টাকা জোগাড় করে থাকেন। এ কাজ করতে গিয়ে রাজনীতিবিদরা অনেক সময় ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এতে ব্যবসায়ীদের নানা অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার পথ সুগম হয়। ব্যাবসায়িক উদ্যোক্তারা যদি রাজনীতিতে আসেন এটাই বরং ভালো হয়। নিজেদের উপার্জিত অর্থ যদি সমাজসেবায় কেউ ব্যয় করতে চান তাতে অসুবিধার কিছু নেই। আমি মনে করি অর্থনৈতিকভাবে নিজের ভিত্তি মজবুত করেই রাজনীতিতে নামা উচিত।’
অসত্ রাজনীতিক নিয়ে সমালোচনায় মুখর হলেও সত্ রাজনীতিবিদদের প্রশংসা তেমন শোনা যায় না। সার্বক্ষণিক রাজনীতিক এখন অনেকটা অপাঙেক্তয়। শিক্ষাঙ্গনে এখন রাজনীতির আবেদন নেই, ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশ নেই, প্রাসঙ্গিকতাও যেন ফুরিয়ে আসছে। বিরাজনৈতিকীকরণেরই আয়োজন চারদিকে। অথচ মনোনয়নের সময় কাম্য প্রকৃত ত্যাগী রাজনীতিক! রাজনীতিকে যেহেতু পেশা হিসেবে দেখা হয় না, তাহলে অন্য পেশা থেকে এখানে আসাটাই স্বাভাবিক। অন্যদের পেশা ছেড়ে বা অবসরের পর আসতে হয়, ব্যবসায়ী আর আইনজীবীরা যেকোনো সময় আসতে পারেন। আমাদের দেশে সংসদে ব্যবসায়ীদের অংশ বাড়ছে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের বেশি আগ্রহ নাকি অন্য পেশার মানুষের রাজনীতিতে আসার অনাগ্রহ দায়ী, তা স্পষ্ট নয়। প্রার্থী বাছাইয়ে তাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের চেয়ে রাজনীতিতে নবাগত ব্যবসায়ী বা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কি না, এতে রাজনীতি রাজনীতিকদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কি না, তা রাজনৈতিক দলগুলোই ভালো বলতে পারবে।
কানাডার নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থী না পেয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ২০ জন ছাত্রকে মনোনয়ন দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ নির্বাচনে ২৬ শতাংশ নতুন মুখ, এঁদের মধ্যে ৭১ বছরের প্রার্থী যেমন রয়েছে, তেমনি আছে ২০ বছরের তরুণ। অস্ট্রেলিয়ার সংসদ সদস্যদের যে ১৪ শতাংশ রাজনীতিসংশ্লিষ্ট, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক তোষামোদকারীরাও (লবিস্ট) রয়েছে। আমাদের দেশের এমন লবিস্টরা দলনিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করেন, পর্দার আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন। সংসদে পেশাভিত্তিক ভারসাম্য রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে হয়তো এঁদের শরণাপন্ন হবে।