একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তাপ বাড়ছে রাজনীতিতে। এ উত্তাপ যেন নিত্যপণ্যের বাজারে না লাগে সেটাই প্রত্যাশা করছেন ভোক্তারা। এর মধ্যে অবশ্য বিক্রেতারা আশার কথাই জানিয়েছেন। রাজনীতির উত্তাপ বাড়লেও স্থিতিশীল চালের বাজারে দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং আরো কমবে।
খুচরা, পাইকারি বিক্রেতা এবং ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরেই স্থিতিশীল রয়েছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য চালের বাজার। পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় গত দুই মাসে পরিমাণে কম হলেও অন্তত দুই দফা কমেছে পণ্যটির দাম। দেশজুড়ে বর্তমানে চলছে আমন ধান কাটার মৌসুম। কৃষকরা উৎপাদন খরচের কমে ধান বিক্রি করায় সস্তাতেই ব্যবসায়ীরা কিনতে পারছেন। যে কারণে নতুন চাল বাজারে আসার পর আরো দাম কমবে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। ভোক্তারা চাইছেন নির্বাচনের আগে চালের বাজারে যেন অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে জানা গেছে, বাজারভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪২ টাকা। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে; প্রতি কেজি মোটা চালের দাম গত এক মাসে অন্তত ৩.৫৩ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। ৪৫ টাকা থেকে শুরু করে ৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি মানের চিকন চাল। টিসিবি বলছে গত এক মাসের ব্যবধানে এই ক্যাটাগরির চালের দাম কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ পর্যন্ত। ভালোমানের পাইজাম ও বিভিন্ন রকম মিনিকেট ক্রয় করা যায় এই দামের মধ্যে। সবচেয়ে ভালো মানের চিকন চাল কিনতে খরচ অবশ্য আরেকটু বেশি হচ্ছে। এই চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০-৬২ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে কথা হয় এক ক্রেতার সঙ্গে। তেজতুরী বাজার থেকে চাল কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে চালের বাজার স্থিতিশীল। ব্যবসায়ীরা তো সব সময় সুযোগ খোঁজে। নির্বাচনকে পুঁজি করে তারা যেন চালের দাম না বাড়ায় সেই প্রত্যাশাই করছি।’
রামপুরার এক মুদি দোকানে চাল কিনছিলেন মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘চালের বাজার বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। যে চাল বর্তমানে ৫৪-৫৫ টাকায় কিনছি, আগে সেটা ৬২ টাকা কেজিতে কিনতে হয়েছে। নতুন মৌসুমের চাল আসবে বাজারে। আশা করছি দাম আরো কমবে।’
আরো কজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে যেহেতু চালের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে, আর নতুন ধান উঠতে শুরু করেছে, নির্বাচনের আগে চালের দাম আরো কমবে এমনটাই যৌক্তিক।
বিক্রেতারা জানান, চালের দাম এমনিতেই কম। কারণ সরাবরাহে কোনো সমস্যা নেই। আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। নতুন ধান বাজারে এলে দাম আরো কিছুটা কমতে পারে।
কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির বিক্রেতা কামরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই-আড়াই মাসে চালের দাম দুই দফায় কমেছে। এখন বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। নতুন চাল সপ্তাহখানেকের মধ্যে বাজারে আসবে। তখন আরো দাম কমতে পারে।’
একই কথা জানান আড়তদাররা। তাঁরা বলেন, বাজারে চালের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এবার আমনের ফলনও ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন চাল বাজারে এলে এ সময় আর দাম বাড়ার সুযোগ নেই।
বাড্ডার কামরুল রাইস এজেন্সির ম্যানেজার খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চালের দাম এখন অনেক কম। বাজারও স্বাভাবিক। সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন দাম কমাটাই স্বাভাবিক।’
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর দেশে ৫৩ লাখ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরকারি প্রণোদনা ও মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তাদের পর্যবেক্ষণের কারণে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ধান চাষ হয়েছে। ৫৫ লাখ ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তবে বাজারে দাম না পেয়ে কৃষকদের হতাশার খবরও শোনা যাচ্ছে। এই মৌসুমে প্রতি কেজি আমন ধানের উৎপাদন ব্যয় ২৫ টাকা ৩০ পয়সা এবং চালের উৎপাদন ব্যয় ৩৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তবে কৃষকরা প্রতি মণ ধান বর্তমানে ৬০০ টাকা বা তার কিছু কম বা বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে কৃষকরা তাদের খরচ ওঠাতে পারছে না। ধানের এই বাম্পার ফলন ও দাম কম হওয়ায় চালের দাম না বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শুধু চাল নয়, শীতকাল হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে সবজির উৎপাদনও হয়েছে। এরই মধ্যে এই সবজি ঢাকার বাজারে আসতে শুরু করেছে। ফলে দামও কমতে শুরু করেছে। ডিসেম্বর মাসজুড়ে সবজির সরবরাহ আর বাড়বে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। তারাও বলছে, সবজির দাম বর্তমানে যা আছে তা আরো কমবে।
কারওয়ান বাজার সবজি ভাণ্ডারের আড়তদার কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শীত মাত্র শুরু হয়েছে। সবজির সরবরাহও বাড়ছে। আরো বাড়বে। এখন আর দাম বাড়ার প্রশ্নই ওঠে না। দাম কমবে এটা বলা যায়।’