দাপট দেখিয়েই মাত্র আড়াই দিনে চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে নিয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ঘূর্ণি উইকেটে স্পিনারদের সৌজন্যে ৬৪ রানের এই জয়ে স্বাগতিকরা ২ ম্যাচ সিরিজে সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। জয়ের লক্ষ্যে ২০৪ রানের টার্গেট পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু সাকিব-তাইজুলদের ঘূর্ণিতে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ১৩৯ রানে। তাইজুল নিয়েছেন ৬ উইকেট। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব এবং মিরাজ।
২০৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মহাবিপদে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ঘূর্ণি উইকেটে ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। পরপর দুই ওভারে তুলে নিয়েছেন দুই উইকেটে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কায়রন পাওয়েলকে (০) মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করেন তিনি। এক ওভার পরেই শাই হোপকে (৩) প্যাভিলিয়নে পাঠান।
এরপর মঞ্চে আবির্ভাব তাইজুল ইসলামের। তার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন অধিনায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। একই ওভারে রোস্টন চেইজকে (০) এলবিডাব্লিউ করেন তিনি। রিভিউ নিয়েও কোনো লাভ হয়নি উইন্ডিজের। লাঞ্চের আগেই ১১ রানে ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসের মতোই বিধ্বংসী মেজাজে দেখা দিয়েছিলেন শিমরন হেটমায়ার। সাকিবের এক ওভারে ২ চার এক ছক্কায় নেন ১৭ রান। শেষ পর্যন্ত এই মারকুটে ব্যাটসম্যান মেহেদী মিরাজের বলে নাঈম হাসানের তালুবন্দি হন।
প্রথম ইনিংসের হাফ সেঞ্চুরিয়ান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শন ডারউইচকে এলবিডাব্লিউ করেন তাইজুল ইসলাম। রিভিউ নিয়ে নষ্ট করা ছাড়া আর কোনো লাভ হয়নি। দেবেন্দ্র বিশুকে (২) বোল্ড করে তাদের ৭ম উইকেটের পতন ঘটান তাইজুল। এই তাইজুলের বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে যান কেমার রোচ (১)। ফিল্ড আম্পায়ার নট-আউট ঘোষণা করলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ। ৭৫ রানে ৮ উইকেট হারায় উইন্ডিজ।
নবম উইকেটে প্রতিরোধ গড়েন সুনিল অ্যামব্রিস আর ওয়ারিক্যান। দুজনের ৬৩ রানের জুটি ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। এই শংকাও দূর করেন মেহেদী মিরাজ। তার বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ওয়ারিক্যান (৪১)। এরপর ৪৩ রান করা অ্যামব্রিসকে তাইজুল মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করলে ১৩৯ রানে অল-আউট হয়ে যায় সফরকারীরা। ৬ উইকেট নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালান তাইজুল ইসলাম।
এর আগে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ৩২৪ রানের জবাবে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে গতকাল দুই সেশনে অল-আউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের সংগ্রহ ছিল ২৪৬ রান। বাংলাদেশ লিড পায় ৭৮ রানের। গতকালই শেষ সেশনে দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। দলীয় ১৩ রানে ২ রান করে ওয়ারিক্যানের বলে অযথা ড্রাইভ খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ইমরুল। তার ওপেনিং সঙ্গী সৌম্য সরকার (১১) রোস্টন চেইসকে তুলে মারতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল হক চেইজের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান ১২ রান করে।
অধিনায়ক সাকিব (১) ওয়ারিক্যানকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন। দেবেন্দ্র বিশুর বল ডিফেন্ড করতে গিয়ে মিঠু বোল্ড হলে ৫৩ রানে ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের। আজ শনিবার খেলার শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৬৯ রানে গ্যাব্রিয়েলের বলে বোল্ড হয়ে যান ‘মি. ডিপেন্ডেবল’ খ্যাত মুশফিকুর রহিম (১৯)। তার ব্যাট আজ আর ভরসা দিতে পারল না।
তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। দেবেন্দ্র বিশুর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৮ রান করে। সর্বোচ্চ ৩১ রান করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং নাঈম হাসানকেও (৫) প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান বিশু। মোট ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন এই স্পিনার। রোস্টন চেইসের বলে তাইজুল (১) ওয়ারিক্যানের তালুবন্দি হলে ১২৫ রানে অল-আউট হয় বাংলাদেশ।