সাংবাদিক জামাল খাশোগির নিখোঁজ তথা ‘হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনায় এই মুহূর্তে পশ্চিমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কূটনৈতিক সংকটের মুখোমুখি সৌদি আরব। নাইন-ইলেভেনে টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার পর বড়ধরনের কূটনৈতিক সংকট এটিই প্রথম। খাশোগি হত্যাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি ভিন্ন মোড় নিয়েছে।এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীরা সৌদি স্টক মার্কেট থেকে তাদের পুঁজি সরিয়ে নিচ্ছে।
সৌদি আরবের আগ্রাসন এবং ইয়েমেনের দুর্দশার সমালোচনাকারীকে প্রয়োজনে হত্যা করে দমন করা হবে, খাশোগির অন্তর্ধান এই বার্তা বহন করে।ওই ঘটনার জন্য ক্রাউন প্রিন্সের দিকে আঙ্গুল তুলছে সবাই। সৌদির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞ আইনপ্রণেতারা। এই প্রতিক্রিয়ায় সৌদি তাদের তেল অস্ত্রের ব্যবহার এবং মস্কো থেকে অস্ত্র কেনার হুমকি দিয়েছে।
তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে খাশোগিকে নির্যাতন করে মারার পর তাকে কেটে টুকরো টুকরো করার পক্ষে শক্ত প্রমাণ মিলেছে। এই ঘটনায় সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। বলা হচ্ছে, তার নির্দেশেই হত্যাকারীদের একটি দল তুরস্কে গিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
যদি এই হত্যার ঘটনায় ক্রাউন প্রিন্সের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশ পায় তাহলে তিনি সাদ্দাম হোসেন কিংবা গাদ্দাফির মতো স্বৈরশাসক হিসেবে পরিগণিত হবেন। যারা তাদের দূতাবাসগুলোকে সন্ত্রাসবাদের আখড়া হিসেবে ব্যবহার করত।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কিং সালমান ক্ষমতা নেয়ার পর, প্রিন্স মোহাম্মদ সৌদি সিংহাসনের পেছনে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। প্রিন্স রক্ষণশীল সৌদিকে আধুনিক করার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু তিনি মানবাধিকার কর্মী ও ভিন্ন মতাবলম্বী সমালোচকদের কণ্ঠ রোধ করে আসছেন। এ মাসেই একজন সৌদি অর্থনীতিবিদকে সন্ত্রাসবাদের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যিনি সৌদি মালিকানাধীন আরমাকো অয়েল কোম্পানির সমালোচনা করেছেন। কোম্পানিটিকে সৌদি অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়। কাতার এবং প্রতিবেশী গরীব রাষ্ট্র ইয়েমেন সম্পর্কে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স। তার নির্দেশে ইয়েমেনের সাথে যুদ্ধে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় সৌদি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় আন্তর্জাতিক চাপ এবং সার্বজনীন মানবাধিকার নীতি সম্পর্কে তিনি বরাবরই উদাসীন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রথমে সৌদি সফর করেন যা তাদের মধ্যকার উষ্ণ সম্পর্ক নির্দেশ করে। ট্রাম্পই প্রথম খাশোগি হত্যা বিষয়ে মন্তব্য করেন।