ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আদেশ দিয়েছেন জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। ইরানের আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) সর্বসম্মতিক্রমে এ বিস্ফোরক রায় দিলেন।
ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর ফের অবরোধ আরোপ করে। ওই অবরোধ আরোপের অবসান চেয়ে আইসিজেতে আবেদন করেছিল তেহরান।
ইরান এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। একে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পরাজয় বলেও অভিহিত করেছে তারা। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এই রায়কে অকার্যকর অভিহিত করে বলেছে, ওই আদালতের এ ধরনের রায় দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
আইসিজের বিচারকরা সর্বসম্মতিক্রমে তাঁদের আদেশে বলেন, ইরানের কিছু পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা ১৯৫৫ সালের ‘ইরান-যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রী চুক্তির বিরোধী। আদালতের প্রধান বিচারক আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফ বলেন, ‘আদালত সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে…৮ মে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী, খাদ্য ও কৃষিপণ্যের পাশাপাশি উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে যেসব বাধা তৈরি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সেসব বাধা নিজ থেকে দূর করবে।’
আদালত আরো বলেছেন, ‘মানবিক প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা ইরানের ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্রতিটি ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও জীবনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া মার্কিন অবরোধ ইরানের বেসামরিক বিমান নিরাপত্তা এবং এর ব্যবহারকারীদের জীবনের জন্যও বিপজ্জনক।’
পরমাণু কর্মসূচি সীমিত রাখার শর্তে ইরানের সঙ্গে ছয় জাতির ‘পরমাণু চুক্তি’ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছরের মাঝামাঝিতে তেহরানের ওপর ফের অবরোধ আরোপ করে। আসছে নভেম্বরে দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় দফায় আরো শাস্তিমূলক অবরোধ আরোপের কথা রয়েছে। এই অবস্থায় জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের রায় এলো।
জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ মীমাংসার বিচার করতে পারেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এই আদালতের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশ মানতে বাধ্য এবং এর বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। তবে রায় বাস্তবায়নে এর কোনো ক্ষমতা নেই।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র দুটি দেশই অতীতে এই আদালতের বেশ কিছু আদেশ অমান্য করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই জোরালোভাবে বলে আসছে, এটি এমন একটি আদালত যার এই ধরনের ঘটনায় আদেশ দেওয়ার কোনো আইনি ভিত্তি নেই, যখন তা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।