আট মাস ধরে ঢাকার একটি বাসাবাড়িতে নির্যাতনের শিকার নড়াইলের ১০ বছরের শিশু রোকসানা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
এদিকে, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আজ মঙ্গলবার (১১সেপ্টেম্বর) সকালে নড়াইল আদালতে হাজির হন গৃহকর্ত্রী সোনিয়া। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। নড়াইল চিফ জুড়িশিয়াল আদালতের বিচারক (লোহাগড়া আমলী আদালত) মো. জাহিদুল আজাদ এই রায় দেন।
এর আগে গত ২২ আগস্ট রোকসানাকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ইলিয়াস হোসেন, তার স্ত্রী সোনিয়া, সোনিয়ার ভাই ইব্রাহিম ও সরবরাহকারী সালেহা বেগমের নাম উল্লেখ করে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা রাসেল শেখ।
সারা শরীরে আঘাতের কালশিটে দাগ, দীর্ঘদিনের লাগাতার নির্যাতনের চিহ্ন, দগদগে ক্ষতও রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে দীর্ঘ আট মাস ধরে এমন কোনও নির্যাতন নেই, যা হয়নি শিশুটির ওপর। নিস্তেজ কঙ্কালসার দেহটি হাসপাতালের বিছানার সঙ্গে লেপ্টে আছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বাতাস, খাদ্যগ্রহণের শক্তিটুকু নিঃশেষ হয়ে গেছে, কৃত্রিম উপায়ে চলছে শ্বাসপ্রশ্বাস।
আট মাস আগে ঢাকার ওয়ারী এলাকার ইলিয়াস হোসেন পলাশ নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে (সেলিম টাওয়ার, বাড়ি-৪৫, লালচাঁন রোড) গৃহপরিচারিকার কাজ নেয় লোহাগড়া উপজেলার বাহিরপাড়া গ্রামের শিশু রোকসানা। সেখানে ইলিয়াস হোসেনের স্ত্রী সোনিয়া, তার ভাই ইব্রাহিম শিশুটির ওপর নির্যাতন চালান।
দীর্ঘ নির্যাতনের একপর্যায়ে রোকসানা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারটি। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে স্বজনদের খবর দিয়ে ঢাকায় এনে গত ১৭ আগস্ট রাতে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় রোকসানাকে। মরণাপন্ন রোকসানাকে ১৯ আগস্ট নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ২৪ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
ঢাকায় শিশু রোকসানার চিকিৎসার খোঁজ নেওয়া নড়াইলের সমাজসেবক আমিরুল ইসলাম লিটু জানান, মৃত্যু পথযাত্রী শিশু রোকসানা এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটের পেড্রিয়াট্রিক আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন। তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে তা সারা টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়েছে।
নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. গোলাম নবী জানান, সোনিয়াকে যেভাবে নিষ্ঠুরতম নির্যাতন করা হয়েছে তা চোখে দেখা যায় না। এই মামলার আসামিদের যেন জামিন না হয় সে ব্যাপারে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা এই জঘন্য কাজ যারা করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশ ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জে তৎপর। এই ঘটনায় আসামিরা যেন জামিন না পান আমরা সেই চেষ্টা করছি।’