Monday , 1 July 2024
সংবাদ শিরোনাম

লড়াইয়ে তুমুলভাবে ঘাম ঝরাচ্ছেন

বার্ট ভেলান্টানি শ্বেতাঙ্গ মার্কিন। শেষ কবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন, মনে নেই। এবারের নির্বাচনে নিজে ভোট তো দেবেনই, সঙ্গে পরিবার ও প্রতিবেশীদেরও ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছেন। গতকাল বুধবার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তাঁর পছন্দ রিপাবলিকান প্রার্থী। উত্তেজিত  বলেন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনে তিনি আর চুপ করে বসে থাকতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে। তাই ভোট দিতে হবে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।এর উল্টো চিত্রও রয়েছে। অনেকে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারিকে ভোট দিতে মনস্থির করেছেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তে নিজের যোগ্যতা আর প্রতিদ্বন্দ্বীর অযোগ্যতা তুলে ধরে ভোটার টানার চেষ্টা করছেন। কে হবেন আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে চলছে বিতর্ক আর গুঞ্জন। জনমত জরিপেও রয়েছে ভিন্নতা। কোথাও বলা হচ্ছে, ট্রাম্প ও হিলারির মধ্যে ব্যবধান খুবই সামান্য। ট্রাম্প এগিয়ে। কোথাও বলা হচ্ছে, হিলারি এগিয়ে।গত মঙ্গলবার এবিসি নিউজ ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপে বলা হয়েছে, জনমত জরিপে ট্রাম্পের পক্ষে ৪৬ শতাংশ ও হিলারির পক্ষে ৪৫ শতাংশ ভোটার। তবে এই জরিপসহ পাঁচটি সাম্প্রতিক জরিপ বিশ্লেষণ করে সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি এগিয়ে। হিলারির পক্ষে ৪৬ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪২ শতাংশ জনসমর্থন রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সত্যিই বলা কঠিন—এই নির্বাচনে কে শেষ হাসি হাসবেন।এই নির্বাচনের দুই প্রধান প্রার্থীই প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। ফ্লোরিডায় দেওয়া বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের উত্থান সারা বিশ্বকে এর মধ্যেই অবাক করে দিয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) আবারও সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে আমরা নিশ্চিত বিজয়ী হব।’ মঙ্গলবার নির্বাচনী বিশ্লেষক, রাজনীতিবিদসহ সব ভাষ্যকারের জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করেছে বলে তিনি বক্তৃতায় বলেন।জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হিলারিও। হিলারি তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘আমি কী আর বলব! ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রমাণ করেছেন তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য মেজাজমর্জির দিক দিয়ে অনুপযোগী ও অযোগ্য।’প্রার্থীরা ও সমর্থকেরা শেষ মুহূর্তে এ লড়াইয়ে তুমুলভাবে ঘাম ঝরাচ্ছেন। রিপাবলিকানরা হিলারির ই-মেইল বিতর্ককে চাঙা রাখার চেষ্টা করছেন। বার্ট ভেলান্টানির মতো শ্বেতাঙ্গরা দাবি করছেন, পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে। সমর্থনের পাল্লা এখন ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। বিশ্বস্ততার প্রশ্নে আমেরিকার সাধারণ জনগণের কাছে হিলারির বাকি সব অর্জন এবং পরিচয় ম্লান হয়ে উঠছে। ট্রাম্প কী বলছেন না বলছেন, এ বিষয়টি আর তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। হিলারিকে তাঁরা কিছুতেই বিশ্বাসে আনতে পারছেন না।হিলারি শিবির কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক ভোটারদের শক্তিকে পুঁজি করে জয় নিজেদের ঘরে তুলে আনতে চাইছে। গতকাল বুধবার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী ভাষণে হিলারি তাই কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিকদের ভোট টানার চেষ্টায় তাদের ভোট দিতে উৎসাহিত করেছেন। নারী ভোটারদের সমর্থন হিলারির পক্ষে বেশি হওয়ায় নারীদেরও নানাভাবে ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করছে ডেমোক্র্যাটরা। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করতে খোদ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এর মধ্যেই মাঠে নেমেছেন। ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার পক্ষ থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে ই-মেইল করা হচ্ছে। এই নির্বাচনে জয় যাঁর পক্ষেই যাক, লড়াইটা যে হাড্ডাহাড্ডি হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশজুড়ে সাধারণ ভোট বলা যাবে না। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলের সমষ্টিতে নির্ধারিত হবে জয়-পরাজয়। মোট ৫৩৮ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের মধ্যে বিজয়ী প্রার্থীকে পেতে হবে কমপক্ষে ২৭০ ভোট। এই ২৭০ ভোটের হিসাব চলছে নানাভাবে। সাধারণ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও কোনো প্রার্থী ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে যেতে পারেন। অঙ্গরাজ্যগুলোর পৃথক পৃথক ইলেকটোরাল ভোট বিভাজনের কোনো কোনো হিসাবে দেখানো হচ্ছে, মোট ভোটের ৩০ শতাংশের কম পেয়েও কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারেন। উভয় প্রার্থীর মধ্যে কেউ ২৭০ ভোট না পেলে কী হবে? আমেরিকার সংবিধান অনুযায়ী সে ক্ষেত্রে, দেশের প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবে। যদিও আমেরিকার ইতিহাসে এমনটি কখনো ঘটেনি।এ ছাড়া ভোটারদের ডাকযোগে দেওয়া ভোট গণনায় পালটে যেতে পারে অনেক কিছুই। আইওয়া ও ওহাইও অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের দিনে ডাকঘরের সিলমোহর দেওয়া ভোটকে গণনায় আনা হবে। দেখা গেল, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এ দুই রাজ্যের একটিতে মঙ্গলবার রাতে জয়লাভ করেছেন এক প্রার্থী। ডাকযোগে দেওয়া ভোট গণনায় সপ্তাহ শেষে হয়তো দেখা যাবে জিতেছেন অপর প্রার্থী। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনী উত্তেজনা কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক ভাষ্যকাররাও ভাবছেন। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল ম্যাকডোনাল্ডের ভাষায়, এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটলে এর পরিণাম হবে ভীতিকর।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top