Saturday , 5 October 2024
সংবাদ শিরোনাম

আমি টারজান,আমিই বনের রাজা!

 হিলটন হোটেলের পেছনে যে সড়ক, তার বিপরীতেই সাবওয়ে মেট্রোরেল স্টেশন। আর ডানে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ইউনিভার্সাল স্টুডিও। সেখানকার ঝকঝকে তকতকে নান্দনিক ওভারব্রিজটি দিন কয়েক আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে যেন হয়ে উঠেছে আরও আকর্ষণীয়। পর্যটকে ভরে আছে ব্রিজের ওপর। ছবি তুলছে আর ফেসবুক দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে। প্রবেশপথেই জাদুরকাঠি নিয়ে বিশাল বিজ্ঞাপনে হ্যারি পটার। রাস্তা ধরে কিছু দূর যেতেই হঠাৎ দেখি বিলবোর্ডে দ্য লিজেন্ড অব টারজান-এর বিজ্ঞাপন। আর কী? সে টারজানের বিলবোর্ড আমাকে ফিরে নিয়ে গেল সেই শৈশবে!বয়স তখন ১০ কি ১১। আমাদের গ্রামটি পাহাড়ের কোলঘেঁষা। যে গ্রামে বসবাস ১৫-২০ পরিবারের। ঘরগুলো সব বাঁশের বেড়া আর শণে ছাউনির। সন্ধ্যায় কুপিবাতিতে পড়া মুখস্থ করার প্রাণান্ত চেষ্টা। প্রায় সব পরিবার খেটে-খাওয়া। কেউ কৃষক, জমিতে কাজ করেন, কেউ আবার চলেন বনের কাঠ সংগ্রহে করে। বাবা অকালে কালগত হওয়ায় আমার মা প্রায় সময়ই যেতেন কাঠ সংগ্রহে। কী কঠিন সময় পার করছিলেন মা। তিন বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। স্কুল থেকে ফিরে এসে কাঠ বিক্রি করতে নিয়ে যেতাম বাজারে। বাজারটি সন্ধ্যার দিকে জমজমাট হয়ে উঠত। সন্ধ্যার দিকে চাকরিজীবীরা কেনাকাটা করতে আসতেন। পাকিস্তান আমলে বিশাল এলাকা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানা দুটি থেকে কিছুটা দূরে এ প্রান্তে ছোট উঁচু টিলায় সিনেমা হল। মিল থেকে আসা পিচঢালা রাস্তাটি পূর্বদিকে যেখানে বাঁক নিয়েছে, তার কিছু আগেই রাস্তাটির ডান পাশে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় ছিল জ্বালানি কাঠ বিক্রেতার জন্য। কাঠ নিয়ে ক্রেতার জন্য অধীর আগ্রহে গামছা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম সেখানে।এখন আর মনে করতে পারছি না, সাপ্তাহিক বন্ধ তখন শুক্রবার নাকি রোববার ছিল। তবে বন্ধের দিন সবাই আগেভাগেই কাঠ বাজারে নিয়ে যেত। এমনই একদিনে কাঠ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, বিক্রেতাদের কেউ একজন খবর পেয়েছে বিটিভিতে টারজান সিরিয়াল প্রচার করছে। সম্ভবত তখন তিনটা বাজে। সে সময় সবার বাড়িতে টেলিভিশন ছিল না। একজনকে বুঝিয়ে কাঠগুলো দেখতে বলে অনেকেই ছুটলাম টিভি দেখতে। সবুজ সংঘ। মিলের কোয়ার্টারে চাকরিজীবীদের ক্লাব। ক্লাবের ভেতর টারজান দেখতে ভরে গেছে অনেক মানুষ। জায়গা পাচ্ছিলাম না। কে যেন বলল ছোটদের সামনে বসতে। সেই সুযোগে বসে গেলাম একেবারে টিভির সামনে। কী দারুণ অনুভূতি টিভি দেখে! বিজ্ঞাপন চলছে। সবার অধীর আগ্রহের প্রতীক্ষা। একসময় ঘোষক এল পর্দায়। বন কাঁপানো আওয়াজ নিয়ে এল বনের রাজা টারজান। বন্য প্রাণীদের সঙ্গে সখ্য আর উত্তেজনাকর লড়াই, এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে চলা।ওই দিনের পর্ব শেষ হলে বুঝলাম কী বিমুগ্ধতায় ছিলাম এতক্ষণ! অদ্ভুত আনন্দ-বিহ্বলতায় ভরে থাকল হৃদয়। এরপর পুরো ছয় দিন প্রতীক্ষায় থাকতাম কবে আসবে বন্ধের দিন। চলে যেতাম তাড়াতাড়ি কাঠ নিয়ে বাজারে। মা জানত না এসব কিছুই। আমি তখন টারজান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। মায়ের সঙ্গে বনে গেলে গাছে উঠে যেতাম। এ ডাল ও ডালে চলে যেতাম। মা শব্দ করে সাবধান করত। বানর, হনুমান, বুনো খরগোশ দেখলে বলতাম, এই আমি টারজান। আমিই বনের রাজা! বাড়ির পেছনে পাহাড়ে বন্ধুদের নিয়ে বড় গাছ থেকে ঝুলে থাকা দীঘল লতায় দোল খেতাম আর বনের রাজা ভেবে সজোরে আওয়াজ তুলতাম টারজানের মতো.

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top