Sunday , 29 September 2024
সংবাদ শিরোনাম

হজের সফরে মৃত্যুও সৌভাগ্যের!

হজ একটি পবিত্র ইবাদতের নাম। আল্লাহপ্রেমের চূড়ান্ত উন্মাদনার প্রতিফলন ঘটে হজে। বান্দা যেমন আল্লাহর ভালোবাসায় তারই পবিত্র আঙ্গিনায় মেহমান হিসেবে হাজির হয়, তেমনি আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিনও তার বান্দাকে ক্ষমা ও জান্নাতের পুরস্কারের মাধ্যমে তার সমাদর করেন।সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো হাজির সঙ্গে সাক্ষাত হলে তাকে সালাম দেবে, মুসাফাহা করবে এবং তার বাড়িতে প্রবেশের আগেই তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুরোধ করবে। কেননা তিনি ক্ষমাপ্রাপ্ত।’মৃত্যু প্রত্যেকটি প্রাণীর ইহলৌকিক জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন; মৃত্যুকে বরণ করতেই হবে। তা হজের সফরেও হতে পারে।এখন চলছে হজের মৌসুম। বাংলাদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাবেন। ইতোমধ্যে হজ পালনার্থে সৌদি আরব গমনকারী হজযাত্রীদের মাঝে ১৬ বাংলাদেশিসহ শতাধিক হজ প্রত্যাশী ইন্তেকাল করেছেন।মৃত্যু কোনো হাজির কাছেই অপ্রত্যাশিত নয়। বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হজ পালনকারীরা সাধারণত সব ধরণের দেনা-পাওনা পরিশোধ করে হজের সফরের জন্য বের হন। কাফনের কাপড়ের মতো ইহরামের সাদা কাপড়ও যেন মৃত্যুর প্রস্তুতির কথাই মনে করিয়ে দেয়। মক্কা অথবা মদিনায় মৃত্যুবরণ করা হাজিদের কাছে বরাবরই মর্যাদার বিষয় হিসেবে বিবেচিত।সব ধরণের শিরক থেকে মুক্ত নেককার কোনো বান্দা যদি পবিত্র দুই নগরীর (মক্কা ও মাদিনা) কোনো একটিতে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তা হবে অতিরিক্ত মর্যাদার বিষয়। সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে। তার হাশর হবে জান্নাতি মানুষ হিসেবে।হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মক্কা অথবা মদিনায় মৃত্যুবরণ করে সে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি লাভ করে হাশরের ময়দানে উঠবে।’ -বায়হাকি; শুয়াবুল ইমান: ৩/৪৯০একজন মানুষ হজ থেকে ফিরে এলে যেমন নিষ্পাপ হয়ে ফেরে, তেমনি হজে গিয়ে মৃত্যুবরণ করলেও তা সৌভাগ্যের মৃত্যু বলে বিবেচিত। সৌভাগ্যের দরজাগুলো খুলে যায় ওই হাজীর জন্য। এমনকি সেই মৃত্যু যদি কোনো দুর্ঘটনামুক্ত স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবুও হজের সফরের সেই মৃত্যু ফজিলতের।হজের আজন্ম স্বপ্নপূরণের আবেগঘন মূহুর্তে যদি কারো কাছে মৃত্যুর অবধারিত পরিণতি হাজির হয়ে যায়- তাহলে তিনি হজ না করেও হজের সওয়াব পেতে থাকবেন অনবরত।হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজের উদ্দেশে বের হলো- অতপর সে মারা গেল, তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত হজের নেকি লেখা হতে থাকবে।’ -সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২/৫; হাদিস নং: ১১১৪আর হজের সময় মৃত্যু কোনো দূর্ঘটনার কারণে হলে তো কোনো কথাই নেই। হজের সফরে কোনো দুর্ঘটনার করণে মৃত্যু হলে সেই হাজি তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক.. .. ..) পাঠরত অবস্থায় হাশরের ময়দানে উত্থিত হবে।জনৈক মুহরিম (হজের ইহরামরত) ব্যক্তিকে তার সওয়ারি ভূপাতিত করলে তার মৃত্যু হয়। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তাকে বরই পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার দু’টি কাপড়েই তাকে কাফন পরাও। তার মাথা ও চেহারা ঢাকবে না। কেননা, সে কিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উত্থিত হবে।’ –সুনানে আবু দাউদ: ৩/২১৩কখনো কখনো হজের সফরের মৃত্যু সরাসরি শহিদী মুত্যুতে পরিণত হয়। বিশেষ করে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে তা শহিদী মৃত্যু বলে গণ্য হবে। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়াও সাত প্রকার শহিদ রয়েছে। ১. মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি, ২. পানিতে নিমজ্জিত ব্যক্তি, ৩. শয্যাশায়ী অবস্থায় নিহত ব্যক্তি, ৪. পেটের রোগে মৃত্যুবরণকারী, ৫. অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি, ৬. যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায়, ৭. সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মারা যাওয়া নারী।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৩/১৫

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top