জীবনহানি ঘটে। এ যুদ্ধের সময় ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল তাহের আহত হন। কর্ণেল তাহের তিন/চার জন সঙ্গীকে নিয়ে ভারতীয় সীমান্তের দক্ষিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত এলাকায় কামালপুরের পাকিস্তানী হানাদারদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য পায়ে হেঁটে তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমন সময় একটি এন্টি পার্সনাল মাইন তার পায়ের চাপে ব্রাষ্ট হয়। ঐ মাইনের আঘাতে কর্ণেল তাহেরের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের সমস্ত সীমান্ত এলাকাব্যাপী পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যরা এন্টি পার্সনাল মাইন ও এন্টি ট্যাংক মাইন বসিয়ে রেখেছিল। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন যুদ্ধরত অবস্থায় ঐ রণাঙ্গনে একটি বিশেষ মবহপব রিহম এর দায়িত্বে ছিলেন। কর্ণেল তাহেরের অবস্থা দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার জন্য তিনি ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীকে অনুরোধ করেন। ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী দ্রুত কর্ণেল তাহেরের নিকট আসেন এবং তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীর প্রচেষ্টায় দ্রুত কর্ণেল তাহেরকে হেলিকপ্টারে করে চিকিৎসার জন্যে ভারতের মাদ্রাজে নেয়া হয়।
মযমনসিংহ-হালুয়াঘাটের যুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন অত্যন্ত সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এখানে তিনি ভারতীয় ৬ষ্ঠ বিহার ব্যাটেলিয়নকে ভারতের গাচ্ছুয়াপাড়া থেকে বাংলাদেশের হালুয়াঘাটে প্রবেশ করার রাস্তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা বাংলাদেশ সীমান্তে বহু এন্টি পার্সনাল মাইন এবং এন্টি ট্যাংক মাইন বসিয়ে রাখে। ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে জীবন বাজী রেখে সমস্ত মাইন অপসারণ করে বিপদমুক্ত রাস্তা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ও ভারতীয় সৈন্যদের ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আক্রমন করার ক্ষেত্র তৈরী করে দেন। মাইনগুলো একটি বাড়িতে একত্রিত করে রাখা হয়েছিল এবং তা পাহারা দেয়ার জন্য কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়োজিত করা হয়েছিল। এন্টি পার্সোনাল মাইন দু’হাটুতে চেপে তামাশা করার সময় হঠাৎ একটি মাইন ব্রাষ্ট হয়ে গেলে আব্দুল বাছেদ বাশার নামক একজন মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করে, যার বাড়ি ছিল টাঙ্গাইল সদর থানার আলোকদিয়া গ্রামে। ১৯৭১ খ্রিঃ ডিসেম্বর পাঁচ/ছয় তারিখে ভারতীয় বাহিনীর ৬ষ্ঠ বিহার ব্যাটেলিয়নের সৈন্যরা ও মুক্তিযোদ্ধারা যৌথভাবে হালুয়াঘাট আক্রমন করে এবং এখানে হানাদারদের সঙ্গে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড আক্রমন প্রাথমিকভাবে হানাদার বাহিনীর তেমন কোন ক্ষতি করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত বিমান আক্রমন চালানো হয়। কয়েকবার বিমান হামলার পর হানাদার সৈন্যরা হালুয়াঘাট ত্যাগ করে। হালুয়াঘাট যুদ্ধে ৬ষ্ঠ বিহার ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ও তাঁর সহযোদ্ধারা অত্যন্ত শক্তিশালী ভূমিকা রাখেন। এখানে ভারতের ১১ জন পদাতিক সৈন্য যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর মর্টার সেলিং আক্রমনে নিহত হন।
হালুয়াঘাট মুক্ত করার পর ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে ভারতীয় মিত্র সৈন্যদের সঙ্গে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হন। ময়মনসিংহ আসার পথে যৌথ বাহিনী ফুলপুর শহর আক্রমন করে। এখানে হানাদারদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে হানাদারদের পতন ঘটে। ফুলপুর মুক্ত করার পর ১০ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনী ময়মনসিংহ শহর আক্রমন করে। এখানে হানাদারদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যৌথ বাহিনী হানাদার বাহিনীর প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হওয়ায় যৌথ বাহিনীকে শেষ পর্যন্ত বিমান হামলা চালাতে হয়। যুদ্ধে হানাদারদের পক্ষে ব্যাপক জীবনহানি ঘটে। ১০ ডিসেম্বর একজন কর্ণেল ও বেশ কয়েকজন অফিসারসহ ৫৫১ জন পাক সেনা যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করে। ফলে ময়মনসিংহ মুক্ত হয়। ময়মনসিংহের যুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। ময়মনসিংহ মুক্ত করার পর ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনকে এখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব দেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ময়মনসিংহের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।
অপরপক্ষে, ৯ ডিসেম্বর মেজর জেনারেল গান্দব নাগরার উপস্থিতিতে ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজী বললেন, আমি এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা চাই যিনি দেশের জন্য এ’ মুহুর্তেই জীবন দিতে পারে। এগিয়ে এলেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু-র সহযোদ্ধা শ্রীবর্দীর তরুন জহুরুল হক মুন্সী বীর প্রতীক। পাক আর্মিদেরকে সারেন্ডার করার আহ্বান সম্বলিত পত্র দিয়ে তাঁকে পাঠানো হলো জামালপুর পাক আর্মি সাব সেক্টর হেডকোয়ার্টারে। সেখানে তাঁকে সকাল ৯ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত ৩১ বেলুচ রেজিমেন্টের ব্যাটেলিয়ন কমান্ডার কর্ণেল সুলতান মাহমুদ খান এবং মবহপব এর লে. মুন্নু খান শান্তি কমিটির বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেক এর নির্দেশে এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ বদর বাহিনীর কমান্ডার এ.কে.এম কামারুজ্জামানের সহযোগিতায় অমানুষিক নির্যাতন করে, উল্টো করে বেঁধে তাঁর হাত ও পায়ের প্রত্যেকটি আঙ্গুলে সূচ ঢুকিয়ে দেয়। বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে একটি হাটুর নীচের হাড় ভেঙ্গে দেয়, নড়বড়ে করে দেয় একটি হাটুর বাটি। তারপর একটি তাজা বুলেট কাগজে মুড়িয়ে বুলেটের জবাব বুলেটে দেয়া হবে লিখে কর্ণেল সুলতান মাহমুদ খান মেজর জেনারেল গান্দব নাগরা ও ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীকে জানিয়ে দেন। তিনি কোনক্রমে যৌথ বাহিনীর শ্রীবর্দী ক্যাম্পে চলে আসেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিশেষ হেলিকপ্টারে ভারতের পুনাতে পাঠানো হয়। এহেন অবস্থায় যৌথ বাহিনী ১১ ডিসেম্বর জামালপুর শহর আক্রমণ করে। এ আক্রমণেও যৌথ বাহিনী পাক বাহিনীর ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ায় যৌথ বাহিনী বিমান আক্রমণ চালিয়ে তাঁদের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। এতে পাক বাহিনীর ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে এবং ৮১০ জন পাকসেনা গ্রেফতার হন।
মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু যুদ্ধে সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা রাখায় মুক্তিবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল মুহম্মদ আতাউল গণী ওসমানী এবং ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজীর ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে আসেন। জেনারেল ওসমানী মাঝে মধ্যেই রণাঙ্গন পরিদর্শনে যেতেন। তিনি ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেনকে পেলেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে আলাপ আলোচনা করতেন। একদিন রণাঙ্গনে জেনারেল এম.এ. গণী ওসমানী-র বক্তব্য রাখার সময় ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন জেনারেল ওসমানীকে প্রশ্ন করেন- ঐড়ি সধহু ? উত্তরে জেনারেল ওসমানী বলেন- ও. জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর উত্তর প্রমাণ করে তিনি একজন খাঁটি দেশ প্রেমিক সেনানায়ক ছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে যে কতটুকু আপন ভাবতেন তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর উত্তরে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সত্যিই নিজ সন্তান তূল্য মনে করতেন।
১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেঃ জেনারেল নিয়াজি তাঁর সহপাঠী সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ ও ৯৩ হাজার জোয়ানসহ যৌথ বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করলে বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়। এ ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে আত্মদান করেছেন প্রায় ত্রিশ লক্ষ নর-নারী, সম্ভ্রম হারিয়েছেন প্রায় তিন লক্ষ মহীয়সী মাতা ও ভগ্নি, জন্ম নিয়েছে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার যুদ্ধ শিশু যারা প্রয়াত মাদার তেরেসার চেষ্টায় ইউরোপ ও আমেরিকায় খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে উঠছে। গৃহহারা হয়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ এবং ছিন্নমূল ও সর্বহারা হয়েছে অসংখ্য জনসাধারণ। শেখ মুজিব ও ড. কামাল হোসেন এ সময়ে পশ্চিম পাকি¯তানের কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছিলেন। তাঁরা মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরলে উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের নিকট অস্ত্র সমর্পন করতঃ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের বিদায় দিয়ে ১৯৭২ খ্রিঃ ২৭ জানুয়ারী গ্রামের বাড়ী টাঙ্গাইল সদর থানার খরশিলায় চলে আসেন।
১৯৯০ খ্রিঃ তিনি “দি ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্টস্ লিমিটেড” নামে একটি উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এছাড়া ১৯৯১ খ্রিঃ তিনি “বাংলাদেশের রাজনীতি” নামক একটি পুস্তিকার ১ম সংস্করণ প্রকাশ করেন, তাতে ১৯৫৭ খ্রিঃ থেকে ১৯৯১ খ্রিঃ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিবর্তনসমূহ সুন্দর ও সাবলিলভাবে তুলে ধরেন।
১৯৯৩ খ্রিঃ প্রথমার্ধে আওয়ামী লীগের একাংশ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির একাংশ, কমিউনিষ্ট পার্টির একাংশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সিরাজ) একত্রিত হয়ে ড. কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন। পরিশেষে ১৯৯৩ খ্রিঃ ২৯ আগষ্ট এ সকল দলের সমন্বয়ে ড. কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে গণফোরাম গঠিত হলে তিনি এ দলের প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন।
বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের চক্রান্তে ১৭৫৭ খ্রিঃ ২৩ জুন নবাব আলীবর্দী খাঁ এর দৌহিত্র বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা পলাশীর আম্রকুঞ্জে পরাজিত ও পরে নিহত হবার ফলে বাংলার স্বাধীনতা ১৯০ বছরের জন্যে কেঁড়ে নিয়েছিল বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ইংরেজরা। শুরু হয় তাদের শোষণ ও শাসন। পরবর্তীতে ১৯৪৭ খ্রিঃ ১৪ ও ১৫ আগষ্ট ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারতের অভ্যূদ্বয় ঘটে। বাংলা ভাগ হয়ে পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয় এবং পশ্চিম বাংলা ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়। তখন থেকেই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠি পূর্ব বাংলাকে শোষণ ও শাসন করতে থাকে। ১৯৭১ খ্রিঃ এক রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পত্তন হয়।
এ উপমহাদেশে রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছে এক’শ পঁচিশ বছরেরও আগে। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস থেকে আরম্ভ করে মুসলিম লীগ, কম্যুনিষ্ট পার্টি, আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, জাসদ, গণফোরাম, বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এবং একের পর এক বহু বিচিত্র দলের আবির্ভাব ঘটেছে এদেশে। মাহাত্মা গান্ধী, নবাব স্যার সলিমূল্লাহ, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলী, সীমান্ত গান্ধী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, মেজর জলিল, ড. কামাল হোসেন বিশেষ করে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন নেতা ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশের জনতাকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে রেখে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একাধিক রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেন।
জনতা প্রায় অন্ধ হয়ে অনুসরণ করেছে নেতাকে এবং নেতার নির্দেশিত রাজনীতিকে। কিন্তু তাদের কাংখিত মুক্তি আজও আসেনি। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও গবেষক মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু তাঁর রচিত “বাংলাদেশের রাজনীতি” গ্রন্থে ভারত, পাকি¯তান ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ভৌগলিক বৈশিষ্টসমূহের চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। সত্যের প্রতি অবিচল থেকে একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, প্রতারিত জনতার কথা; তাদের আশা-আকাংখা বেদনা ও ক্ষোভের কথা। এ পুস্তিকাটি নিপিড়িত, নির্যাতিত, মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে সামাজিক অর্থনীতিতে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এদেশের রাজনীতিতে অংশরত সর্ব মহলে নানাভাবে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগাবে এবং অনেক অজানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে।
১৯৯৩ খ্রিঃ তিনি “লেবু দাতব্য চিকিৎসালয়” নামে একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, যা আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য, স্থাপন করেন।
ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ১৯৯৬ খ্রিঃ ১২ জুন অনুষ্ঠিতব্য দেশের সাধারণ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা- ১৩৭, টাঙ্গাইল- ৫ (টাঙ্গাইল সদর- দেলদুয়ার) থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
১৯৯৬ খ্রিঃ তিনি “এম. খোরশেদ লাইব্রেরী” নামে একটি সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, যা আবুল হোসেন পীস্ ফাউন্ডেশন এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য, স্থাপন করেন।
১৯৯৭ খ্রিঃ ৩ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু এর নেতৃত্বে টাঙ্গাইলের বেলতা রক্ষিতস্থ, কার্যালয় সন্তোষ, টাঙ্গাইল এ একটি নিরপেক্ষ ছাত্র সংগঠন ‘জাতীয় ছাত্র কংগ্রেস’ গঠিত হয়।
এতদ্ব্যাতীত ২০০০ খ্রিঃ তিনি “সেতু হাউজিং লিঃ” নামে একটি রিয়েল এষ্টেট কোম্পানী প্রতিষ্ঠা/স্থাপন করেন। ২০০১ খ্রিঃ তিনি “ইসলামিক বাস্তু লিঃ” নামে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাবে উপরোল্লিখিত প্রতিষ্ঠান দু’টোর কার্যক্রম বেশীদূর এগিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন ২০০১ খ্রিঃ ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দেশের সাধারণ নির্বাচনে গণফোরামের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকা- ১৩৭, টাঙ্গাইল- ৫ (টাঙ্গাইল সদর – দেলদুয়ার) থেকে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।
২০০৩ খ্রিঃ ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে এম.বি.এ পাশ করেন।
গণতন্ত্র ও শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে সুশীলসমাজসহ দেশের আপামর জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়াসে ২০০৩ খ্রিঃ ২৩ মার্চ বিজয় সরণী টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এ এক আলোচনা সভার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন আবু ‘বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি)’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়ার মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মারফত আলী মাষ্টার, টাঙ্গাইলের আইয়ুব উদ্দিন ভূঞাসহ আরও অনেকে।
৩ এপ্রিল, ২০০৪ টাঙ্গাইলের সন্তোষ- বেলতা রক্ষিতস্থ এর কার্যালয়ে জাতীয় ছাত্র কংগ্রেস (ঘঝঈ) এর ৭ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্রতা দূরীকরণে; নারী ও শিশু নির্যাতন, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজী, অপহরণ, খুন, গুম. বোমাবাজী, ঘুষ-দূর্ণীতি বন্ধে; যুগোপযোগী শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রবর্তনে; স্বল্প ব্যয়ে বাসস্থান ও যোগাযোগ উন্নয়নে; আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় দেশ, জনগণ ও ছাত্র সমাজের স্বার্থে ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর নেতৃত্বে ১২ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়।
১৪ ডিসেম্বর, ২০০৫ রোজ বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায়, বিজয় সরণি টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা- ১২১৫ এ বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর নির্বাহী কমিটির এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় উগ্র জঙ্গী গোষ্ঠী কর্তৃক ১৯৯৯ খ্রিঃ ৬ মার্চ যশোহর টাউন হলে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, ২০০১ খ্রিঃ ২৮ জানুয়ারী পল্টনে সিপিবির জনসভায়, ২০০১ খ্রিঃ ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ, ১৪০৮) রমনার বটমূলে উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, ২০০১ খ্রিঃ ৩ জুন গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের গীর্জায়, ২০০১ খ্রিঃ ১৬ জুন নারায়নগঞ্জের আওয়ামী লীগ অফিসে, ২০০২ খ্রিঃ ৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শহরের ৪টি সিনেমা হলে, ২০০৪ খ্রিঃ ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসমাবেশে, ২০০৫ খ্রিঃ ১৭ আগষ্ট ৬৩টি জেলায় ৫০০টি স্থানে একই সময় একযোগে, ২০০৫ খ্রিঃ ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠীতে ২ বিচারকের গাড়ীতে এবং সর্বশেষ ২০০৫ খ্রিঃ ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা/গ্রেণেড/সিরিজ বোমা হামলার তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।
২০০৫ খ্রিঃ ২৩ মার্চ রোজ বুধবার, ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর বাসভবন রক্ষিত বেলতা, সন্তোষ, টাঙ্গাইলে, ২০০৬ খ্রিঃ ১৭ অক্টোবর রোজ মঙ্গলবার, বিজয় সরণী টাওয়ার, ২য় তলা-এ, ১২১/৩ তেজকুনিপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ এ এবং ২০০৭ খ্রিঃ ৪ আগষ্ট রোজ শনিবার ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন এর বাসভবন রক্ষিত বেলতা, সন্তোষ, টাঙ্গাইলে বিশেষ সাংগঠনিক সভাসমূহের মাধ্যমে বেঙ্গল জাতীয় কংগ্রেস (বিজেসি) এর কার্যক্রমকে দেশব্যাপী বিস্তৃতি ঘটানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।