সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী একদলীয় শাসন কায়েমের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের ষড়যন্ত্রের উলঙ্গ রূপ ছিল বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক (সাবেক প্রধান বিচারপতি) অবসর গ্রহণের পর বির্তকিত রায় লিখেছেন এবং স্বাক্ষর করেছেন। কিসের জন্য? শুধুমাত্র একটা লোভের কারণে। তিনি চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বড় পদ। তিনি সেখান থেকে ডিমোশন হয়ে একটা চাকরি করার জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছেন।
সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ। তবে এর আওতায় আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে বলে মত দেওয়া হয়। ওই সময় সংক্ষিপ্ত রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বলে, বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বাদ রেখে সংসদ এ সরকার পদ্ধতি সংস্কার করতে পারে। বিচারপতি খায়রুল হক ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে যাওয়ার পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়। এর আগে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির ওই রায়কে ভিত্তি ধরেই ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির পাশাপাশি ৫৫টি সংশোধনীসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয় জাতীয় সংসদে।
অবসরের পর বিচারকদের রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী- দুইদিন আগে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার এমন মন্তব্যের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে আইনজীবীদের কাছ থেকে। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সমর্থনে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় অবৈধ ছিল। তবে ঘোষিত রায় অবসরের পর লেখায় বেআইনি কিছু দেখেন না বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিজভী বলেন, খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং ভোটার রাইটস আমি আমার খুশি মতো ভোট দেব- এই অধিকার বন্ধ করেছেন। অর্থাৎ বিচারপতি খায়রুল হক প্রধানমন্ত্রীকে রাজার মতো ক্ষমতা দিয়েছেন পঞ্চদশ সংশোধনীতে সহায়তা করে।”
সাবেক প্রধান বিচারপতির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের একদলীয় দুঃশাসনে ব্যর্থ বাকশালের ফেলে যাওয়া জুতা পুনরায় আওয়ামী লীগের শাসকদলের পায়ে গলিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। এটা ছিল আবারও নিষ্ঠুর নির্দয় গণতন্ত্র ধ্বংসকারী একদলীয় শাসন কায়েম করার জন্য উচ্চ পর্যায়ের ষড়যন্ত্রের উলঙ্গরূপ, যেটি আবার গত পরশুদিন জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বক্তব্যে।
ব্রাক্ষনবাড়ীয়ায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে রিজভী বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের যৌথ আক্রমণে একজন ছাত্র নিহত ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবণতি ঘটে, যা জেলার জনসাধারণ জানেন। অথচ ওই ঘটনায় বিএনপির জেলা সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ ৪৪ জনের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেছে। অবিলম্বে নেতাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান রিজভী। একই সঙ্গে বুধবার রাজশাহীর তানোর পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তিও দাবি করেন তিনি।