ইন্টারনেট ব্যবহারে দেশে ক্রমেই বাড়ছে সাইবার অপরাধের সংখ্যা। বেসরকারি হিসেবে, প্রতি ২০ সেকেন্ডে এ ধরণের একটি করে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে ব্যক্তি থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনেও।
এ অবস্থায় শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনই সাইবার অপরাধের লাগাম টানা না গেলে অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
অপলক নয়নে অবিরাম চেয়ে থাকা। শহর কিংবা গ্রামে, ঘরে কি বাইরে- একমনা চাহনির এমন দৃশ্য আজকাল কোথাও যেন অচেনা নয়। কেননা, যুগটাই এখন ফেইসবুকের।
দেশে ক্রমশ বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। সরকারি হিসেবে, বর্তমানে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গ্রাহক প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। এর মধ্যে কেবল গত দু’বছরেই গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২ কোটি। বিপুল সংখ্যক এসব মানুষ আবার যুক্ত হচ্ছেন সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে। বিশেষ করে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে।
ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান এই ব্যবহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার অপরাধের সংখ্যা। বেসরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬০ ভাগই কোনো না কোনোভাবে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। ছদ্মবেশে বখাটেপনা থেকে শুরু করে সামাজিক মাধ্যমে অহরহ-ই হচ্ছে হ্যাকিং, ঘটছে ব্ল্যাকমেইলের মত ঘটনাও।
কেবল সামাজিক মাধ্যমই নয়, সাইবার আক্রমণ হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর ওয়েবসাইটগুলোও এ হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তথ্য চুরির পাশাপাশি দেশের ব্যাংকিং ও অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই ঘটছে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার মত ঘটনা।
এ অবস্থাকে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য ‘অশনি সংকেত’ হিসেবে দেখছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
সমাজবিজ্ঞানী ড. মনিরুল ইসলাম খান বলেন, ‘যেকোন প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রয়োগ আছে। এটার মাধ্যমে ক্রাইম যদি হতে থাকে তাহলে অপরাধ প্রচুর বাড়তে থাকবে। এতে করে এই প্রযুক্তিটি ভয়াবহ ক্রিমিনাল প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হবে। ইন্টারনেটের ঝুঁকিগুলো সম্বন্ধে মানুষকে বেশি করে সজাগ করতে হবে। কাউন্টার টেকনোলজি বাংলাদেশে আরও দ্রুত নিয়ে আসতে হবে।’
বলা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতে অপরাধের সবচেয়ে বড় জগত হতে চলেছে সাইবার জগত। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশ- যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই অসচেতন, সেখানে সাইবার অপরাধ দমনে সরকারের উদাসীনতা, ক্ষতির বড় কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অপরাধবিজ্ঞানীরা।